সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় ঢাকা: পররাষ্ট্র সচিব

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বাংলাদেশ। ভারত, চীন, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্র– সব দেশ বা শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। বন্ধু দেশগুলোর মধ্যে কারও ভেতরে পারস্পরিক অস্বস্তিকর সম্পর্কের বিষয়েও সরকার সচেতন আছে। তবে কোনও ‘জিরো সাম গেমে অংশ’ নেবে না বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের যে মৌলিক পররাষ্ট্র নীতি আছে সেটি অনুযায়ী চলছি। অর্থাৎ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এখন বন্ধুত্বের মধ্যে পুরোনো বন্ধু, নির্ভরযোগ্য বন্ধু– বিভিন্নভাবে বিশেষায়িত করা যায়। তবে সামনে চীনের সফর আছে এবং আমরা এমন কোনও কিছু করছি না যেটি জিরো সাম গেম হয়। অর্থাৎ সবার জন্য লাভজনক এমন একটি পরিস্থিতিতে থাকতে চাইছি সব দেশের সঙ্গে।
ভারত ও চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে জিরো সাম গেম বলে কিছু নেই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশের তুলনা করতে চাইছি না। এছাড়া অন্য যে দেশগুলো আছে সেগুলোও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের পরে রাশিয়া নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলছে, কিন্তু আমরা ভারসাম্য রক্ষা করছি। আমরা কোনও নির্দিষ্ট জোটের কারণে কিছু করছি, বিষয়টি সেরকম নয়। আমাদের যে অগ্রাধিকার, উদ্বেগ বা জাতীয় স্বার্থ– সেগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার হিসাবে রাখতে চাই, বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২১ থেকে ২২ জুন ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনাই হবে তাদের প্রথম বিদেশি অতিথি। এরপর জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের কথা রয়েছে।
ভারত ও চীন
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে, ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা এবং প্রেক্ষাপট থাকে। সুতরাং আমরা তুলনা করতে চাই না বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক ডিফাইনিং ফ্যাক্টর আছে। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্বে চীনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউজ, তাদের বিনিয়োগের সক্ষমতা আছে, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও তাদের একটি অবস্থান রয়েছে। সুতরাং ওইসব দিক থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বা দৃঢ় করার আগ্রহ রয়েছে। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে এবং এখন যে পর্যায়ে আসছে অর্থাৎ সোনালি অধ্যায়– এটিকে আরও কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটিও আমাদের বিবেচনায় থাকবে।
সবার সঙ্গে যোগাযোগ
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বর্তমান যে বৈশ্বিক পৃথিবীতে আমরা বাস করি, সেখানে সাপ্লাই চেইন বা ভূ-রাজনীতি– যেটির কথাই বলেন, সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়টি অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। তিনি বলেন, ভারত-চীন বাণিজ্য বা চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অনেক বেশি এবং এর মানে হচ্ছে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন, তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেক বেশি দৃঢ়। এভাবেই চলছে সারা বিশ্ব। সুতরাং আমরাও চাইবো যাতে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশ বা একটি নির্দিষ্ট জোটের প্রতি বেশি নির্ভরশীল না হয়ে আমরা যদি সবার সঙ্গে চলতে পারি সেটি আমাদের জন্য ভালো। পণ্য বা নিরাপত্তার কারণে কোনও একটি দেশের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা না আসে, এভাবেই আমরা আমাদের স্বাধীন ও বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করছি বলে তিনি জানান।