মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

সবাই বাঘের মতো লড়াই করেছে; মুশতাক

রিপোর্টার / ৯ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মুশতাক আহমেদের জন্য পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই হতে দেখার অনুভূতিটা অন্য রকম হওয়ার কথা। কারণ সাবেক এই পাকিস্তানি লেগ স্পিনার এই সিরিজে ছিলেন বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচের ভূমিকায়। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের রণকৌশল সাজানোর পেছনে মুশতাকের ‘লোকাল নলেজ’–এর ভূমিকার কথা বেশ কয়েকবার বলেছেন। মুশতাকও বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়ে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পেরে গর্বিত বোধ করছেন।
ইতিহাসের সাক্ষী হতে কার না ভালো লাগে! মুশতাকও ব্যতিক্রম নন। আজ পাকিস্তানে মুশতাককে ফোন করে জানা গেল সেই অনুভূতির কথা, আমি এই দলটার অংশ হতে পেরে খুবই গর্বিত ও সম্মানিত। আমি যখন বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলে যোগ দিই, তখন ওদের বলেছিলাম, এই দলটা যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য রাখে। ওদের কোচিং করিয়ে অন্য রকম একটা আনন্দ আছে। ওরা যেভাবে পাকিস্তানে খেলল, এককথায় অসাধারণ। প্রত্যেকেই বাঘের মতো লড়াই করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এটা একটা দলীয় চেষ্টার ফল। ওদের জন্য আমি খুবই আনন্দিত।
পাকিস্তান সফরজুড়ে পেস বোলিং বিভাগের পাশাপাশি স্পিন বিভাগের অবদানও ছিল উল্লেখযোগ্য। মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের ছবি পাল্টে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেটও মিরাজের। পাকিস্তানের মতো ব্যাটিং স্বর্গে একজন ফিঙ্গার স্পিনার হিসেবে এ অর্জনের মাহাত্ম্যটা অন্য রকম।
মুশতাকের কাছে এ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা (লাহোরের) গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যখন এসেছিলাম অনুশীলনের জন্য, তখন মিরাজের সঙ্গে ওভার স্পিন ব্যবহার করা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ফিল্ড পজিশন ঠিক রাখার ব্যাপারটা ছিল, ক্রিজের ব্যবহার এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, টেস্ট ম্যাচের মাঝে টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে খুব বেশি আলাপ হয় না, এগুলো হয় ক্যাম্পে। ম্যাচের সময় আলাপ হয় ট্যাকটিকস নিয়ে। পাঁচ-ছয়টি ট্যাকটিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। এই যেমন রিজওয়ানের প্রথম টেস্টের আউটটি। সে সুইপ ভালো খেলছিল। তাই আমরা বললাম রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে বোলিং করতে। সেটাই কাজে দিয়েছে। তবে কৌশলগত তথ্যের চেয়ে মিরাজকে আত্মবিশ্বাস ও সাহস জোগানোর কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেন মুশতাক, ‘মিরাজকে বিশ্বাস দেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। ফিঙ্গার স্পিনার হলেও রান নিয়ে না ভেবে আমি তাঁকে সাহসী বোলিং করতে বলেছি। বল ঘোরাতে বলেছি। যদি সে বল ঘোরাতে পারে, তাহলে ন্যাচারাল ভ্যারিয়েশন মিলিয়ে সেখানে মিরাজের উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
বাংলাদেশের এই দল সামনে আরও ভালো করবে বিশ্বাস মুশতাকের, সেই বিশ্বাসের ভিত্তিও আসলে ক্রিকেটারদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস। সেটাই বললেন বিস্তারিতভাবে, ‘বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বকাপের সময়ও আমি ছেলেদের এই একই কথা বলেছি। বলেছি, আমাদের স্পিনার আছে যারা ওই উইকেটে বল ঘোরাতে পারবে। সাকিব আছে। পেসারদের মধ্যে রানা, তাসকিন, হাসান আছে। মুশফিক, শান্ত, লিটন আছে। আপনি বলুন, আমরা কেন বিশ্বাস করব না। আমি ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের সব সময় বলতাম, তোমরা কন্ডিশন নিয়ে ভেবো না। বরং বিশ্বাস করো যে তোমাদের ভালো করার সামর্থ্য আছে। ওই বিশ্বাসটাই পরিকল্পনা ও প্রতিভাকে পারফরম্যান্সে রূপ দেব। আমি বিশ্বাস করি, এই দলের মধ্যে সেই বিশ্বাসটা আছে।
পাকিস্তান সফরে সাফল্যের রেশ নিয়ে বাংলাদেশ দল ১৫ সেপ্টেম্বর যাচ্ছে ভারত সফরে। সেখানে অবশ্য মুশতাককে পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে গত এপ্রিলে দুই মাসের চুক্তিতে বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছিলেন মুশতাক।
পরে পাকিস্তান সিরিজের জন্য দিনভিত্তিক চুক্তি করেন। আপাতত বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও ভবিষ্যতে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। সেটা হতে পারে মাস তিনেক পরই। এ সময়টাতে নিজের নানা রকম ব্যস্ততার কথাও জানিয়ে দিলেন, ‘আগামী তিন মাস আমার পারিবারিক কিছু ব্যস্ততা আছে। আমার মেয়ের বিয়ে সামনে। পাকিস্তানে তৃণমূল পর্যায়ে কোচিংয়ের কিছু কাজ আছে। এই চুক্তিটা আগে থেকেই করা ছিল। আমার এজেন্ট বিসিবির সঙ্গে কথা বলছে। আশা করছি, তিন মাস পর থেকে বিসিবির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যেতে পারব।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় স্পিন বিভাগ নিয়ে তাঁর ভাবনার কথাও জানিয়েছেন মুশতাক, ‘আপনি খেয়াল করে দেখবেন, এই টেস্ট সিরিজে বেঞ্চে কে কে বসে ছিল। তাইজুল ও নাঈম। দুজনই কিন্তু ম্যাচ উইনার। চিন্তা করে দেখুন, স্পিন বোলিং বিভাগে কতটা ভালো প্রতিযোগিতা চলছে বাংলাদেশ দলে। সাদা বলে রিশাদ অনেক উন্নতি করছে। এক-দেড় বছরের মধ্যে লাল বলের ক্রিকেটেও উন্নতি করবে সে। তখন তাঁকেও বিবেচনায় আনা যাবে। আমাদের মিস্ট্রি স্পিনার খুঁজতে হবে। আমি ঢাকার একাডেমিতে ১০-১৫ জন স্পিনারকে দেখেছি। ওদের নিয়ে যদি কাজ করা যায়, ভবিষ্যতে প্রক্রিয়া ধরে রেখে যদি ওদের উন্নতি করানো যায়, তাহলে বেঞ্চের শক্তিও বাড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর