সংঘাতে বিরতির পর যা যা দাবি করছে ভারত ও পাকিস্তান

কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটকের প্রাণহানির সূত্র ধরে সংঘাতে জড়ায় দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শুরু করে সামরিক অভিযান। শেষ পর্যন্ত মার্কিন মধ্যস্থতায় সেই সংঘাতের আপাত অবসান ঘটেছে। তবে এরপরও দুপক্ষের নানামুখী পালটাপালটি অভিযোগ শেষ হচ্ছে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফটির খবরে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর অস্ত্রবিরতির ঘোষণা আসে শনিবার (১০ মে) রাতে। এরপরও শনিবার দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় গোলা ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তবে রোববার (১১ মে) রাত ছিল পুরোপুরি শান্ত। তবে এ দিন দুপক্ষই সংঘাত নিয়ে পালপাপালটি দাবির কথা জানিয়েছে।
ভারত যা বলছে
রোববার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটোন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব এয়ার অপারেশনস এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী এবং নৌ বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব নেভাল অপারেশনস ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের তথ্য দেন।
ভারতীয় শীর্ষ এসব সেনা কর্মকর্তার দাবি, অপারেশন সিঁদুরের ফলে ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা মারা গেছেন। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। চাকলালা, রফিকি, সরগোদা, জাকোকাবাদ, ভুলারির মতো অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়েছে। ভারতের নৌ বাহিনী করাচিতে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।
অস্ত্রবিরতিতে থামল যুদ্ধের দামামা
লেফটোন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানিয়েছেন, ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করা হয়েছিল। তার ফলে ইউসুফ আজহার, আব্দুল মালিক রউফ ও মুদসসর আহমেদসহ শতাধিক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ ও পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিও রয়েছে।
তারা জানান, ভারতের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, মুজাফফরাবাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সেগুলিকে বিধ্বস্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের হামলা প্রসঙ্গে ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা করার চেষ্টা করে। শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ড্রোন, পাইলটহীন বিমান দিয়ে হামলা করতে চেয়েছিল। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেগুলোর মোকাবিলা করে এবং তা ব্যর্থ করে দেয়। পাকিস্তানের বেশকিছু যুদ্ধবিমান ভারতীয় সীমান্তে ঢোকার আগে গুলি করে নামানো হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
ভারতের দাবি, পাকিস্তান এই আক্রমণ করেছিল বলেই ভারতকে পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে হয়েছে। তা না হলে ভারতের আক্রমণ জঙ্গি ঘাঁটি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে ভারত এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে তাদের আগ্রাসী মনোভাব কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ বলেন, পহেলগামের ঘটনার পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ, রণতরী, বিমানসহ সব বিভাগকে সমুদ্রে মোতায়েন করা হয়েছিল। নৌ বাহিনী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে আরব সাগরে বেশকিছু জায়গায় কৌশলগত অবস্থান নেয়। তারা করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করার জায়গায় ছিল। পাকিস্তান পুরোপুরি রক্ষণাত্মক অবস্থান নেয়।
ভারতের সেনাদের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতীয় সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচজন ভারতীয় সেনা সংঘাতে মারা গেছেন। তবে যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না জানিয়ে তারা বলেন, লড়াইয়ে কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে। যেহেতু সংঘর্ষে এখনো সম্পূর্ণভাবে থামেনি, তাই এ বিষয়ে এখনই তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে সব পাইলট নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের দাবি
পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল পাবলিক রিলেশনস এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ, নৌ বাহিনীর নেভাল স্টাফ (অপারেশন) ডেপুটি চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রাব নওয়াজ এবং পাকিস্তান সেনার প্রধান মুখপাত্র লেফটোন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প
তাদের দাবি, ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর তারা অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস শুরু করেন। ভারতের ২৬টি সামরিক টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এর মধ্যে ছিল সুরাতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, ভাতিন্দা, বারনালা, হালওয়ারা, অবন্তীপুর, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, আম্বালা, উধমপুর ও পাঠানকোট। প্রতিটি জায়গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, ব্রক্ষ্মস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারত পাকিস্তানে হামলা করেছিল। সেই ফ্যাসিলিটি ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের নৌ বাহিনীও মুম্বাইয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল বলে দাবি করেন তারা।
পাকিস্তানের কর্মকর্তারা আরও জানান, পাকিস্তান কাউকে সংঘর্ষবিরতির অনুরোধ করেনি। কেউ যদি যুদ্ধে নামে তাহলে দুই পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নামবে। তাই পাকিস্তান খুবই সংযত ও পরিণতভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে।