বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সারাদেশে ২৬,১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে : নৌপ্রতিমন্ত্রী নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে চার মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম স্থগিত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকবে চীন : লিউ জিয়ানচাও অ্যাসাঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্য ছাড়লেন ট্যাক্সের আয়ের চেয়ে তামাকজনিত চিকিৎসা ব্যয় বেশি : ডা. আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের লজ্জার হার: সেমিতে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার বিদায় খেলোয়াড়রা নিজের কাজে সৎ ছিল, ক্ষমা চাইলেন শান্ত ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সাকলায়েন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার: পরিমণি শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের অধ্যায়

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু / ২৩ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

জননেত্রী শেখ হাসিনা-বাঙালির ভরসাস্থল, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বাতিঘর, আমাদের প্রধানমন্ত্রী। মানবিকতার মশাল হাতে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ কিছুই তাঁর জন্য সহজ ছিল না। বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি আজকের এই অবস্থানে নিজেকে আসীন হয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নির্মমভাবে হত্যার সময় দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় (জার্মানি) ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এক রাতে নিমিষেই তাদের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে ঘন কালো মেঘ, সব কিছু মুহূর্তে পাল্টে যায়, রাষ্ট্রপতির কন্যা থেকে তারা এতিম হয়ে যান। তাদের আশপাশ, পরিবেশ, পরিচিতজন সবই কেমন অচেনা হয়ে যায়। কাছের অনেকে পাল্টে ফেলে তাদের রূপ-যেন বেঁচে যাওয়া দুই বোন তাদের জন্য হয়ে ওঠেন বোঝা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে শোকে মুহ্যমান হয়েও জীবন বাঁচাতে তাদের ছুটতে হয়েছে এখানে-সেখানে। আশ্রয় পান ভারতের দিল্লিতে, সেখানেও তাদের কড়া নিয়ম, ভয়, আতঙ্ক ও সরকারি বিধি নিষেধের মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। সেখান থেকে শেখ রেহানা অনেক কষ্ট করে এক সময় লন্ডন যান। শুরু করেন জীবনের আরেক সংগ্রাম। নির্বাসিত জীবনের সেই দিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাদের কাছে অম্লান। ৬ বছর অনেকটা উদ্বাস্তু হয়ে তাদের দিল্লিতে থাকতে হয়। অনেকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করেন আবার অনেকে কোনও প্রকার যোগাযোগ করেনি।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হলে দেশে ফেরার তাগিদ যেন আরও বেড়ে যায়। তখন স্বৈরশাসক জিয়া ক্ষমতায়। শেখ হাসিনাকে ফিরতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাধা দেওয়ার সকল প্রক্রিয়া চালানো হয়। শেখ হাসিনার দেশে ফেরা ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটিও করা হয়েছিল, যেন তিনি আর দেশে ফিরতে না পারেন। অথচ শাসকগোষ্ঠী ভুলে গিয়েছিল তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, কখনও মাথা নত করার নন, পরাভব মানবার নন। মাথা উঁচু করে ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করে চলার সাহস রাখেন তিনি। শেখ হাসিনার দেশের প্রতি, স্বাধীন বাংলাদেশের মাটির প্রতি, প্রিয় জন্মভূমির প্রতি টান সকল বাধাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। কোনও বাধা, ষড়যন্ত্র, অপশক্তি তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঠেকাতে পারেনি। জাতির পিতার মতোই তিনি অবিচল ও স্বীয় সিদ্ধান্তে দৃঢ় থেকে স্বদেশের মাটিতে ফিরে এসেছিলেন।

তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে এসেছিলেন, প্রিয়জনদের হারিয়েও প্রিয় মাতৃভূমির জন্য, দেশের মানুষের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও দেশের গতিপথ পরিবর্তনে একটি অনন্য অধ্যায়। যা গভীর বিশ্লেষণ ও গবেষণার দাবি রাখে। সেদিন হয়তো মনে হয়েছিল তিনি শুধু সশরীরে দেশে ফিরে এসেছেন, কিন্তু দেশের ইতিহাস বলে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের সমাজ, রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

শেখ হাসিনার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেদের প্রতি পুনরায় বিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করে। জাতির পিতা শেখ মুজিবকে হত্যার পর অবৈধ স্বৈরশাসকরা দেশের গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। শেখ হাসিনার দেশে ফিরে এসে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নব সূচনা করেন। সে সময়কার কারফিউ গণতন্ত্রকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনতে শেখ হাসিনা আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন। শেখ হাসিনার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে দেশে স্বৈরশাসকদের মননে চিড় ধরে যায়, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হয়। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে পুনরায় উজ্জীবিত হয়েছিল।

জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেও ষড়যন্ত্র, বুলেট তাঁর পিছু ছাড়েনি। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি সবসময় তাঁকে হত্যা করতে নানা প্রক্রিয়া চালু রেখেছিল, ২১ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই অসীম সাহসী; তাই কোনও ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে দমাতে পারেনি। গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছিলেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সহযোগিতা করেছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি বুলেট বোমাকে উপেক্ষা করে নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণে নিজে আত্মনিয়োগ করেছেন। স্বৈরশাসকরা, দেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতি পদে পদে তাঁকে বাধা দিয়েছে, হত্যার জন্য চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ মানুষের ভালোবাসাই তাঁকে শক্তি, সাহস প্রেরণা জুগিয়েছে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের সামগ্রিক গতিধারাকে পরিবর্তন করে। যার সুফল আজকে দেশের মানুষ পাচ্ছে। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছিল, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে পুনরুদ্ধার করেছিল।

১৯৮১ সালের ১৭ মে যদি শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে ফিরে না আসতেন তবে এই বাংলাদেশ কোন পথে যেত তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অনিবার্য ছিল। মানুষের পাশে ছিলেন বলে, মানুষকে আপন করে নিয়েছেন বলে তিনি আজ জননেত্রী, দেশরত্ন, আমাদের আশার আলো।

কন্টকাকীর্ণ পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন, স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন, ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ, ভোগবিলাসিতা বিসর্জন দিয়ে দেশকে গড়েছেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছেন– এমন কঠিন কর্মযজ্ঞ শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যার দ্বারাই সম্ভব। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে বাংলাদেশকে নতুন রূপে সাজিয়েছেন। আমরা দেখি, বিশ্বের অনেক নেতা নানা কারণে নির্বাসিত হয়েছেন, তাদের অনেকে আবার সমঝোতা করে দেশ ফিরেন কিন্তু শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে আপস বা সমঝোতা করে দেশে ফিরে আসেননি। পিতার মতোই জনগণের ভালোবাসাকে সাহস-শক্তিতে রূপান্তরিত করে তিনি এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন, নীলকণ্ঠী হয়েছেন কিন্তু কখনও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নে দৃঢ়চেতা থেকে তিনি নিজেকে রেখেছেন অবিচল। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর