রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েস বংলা প্রতিবেদক / ১২ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। তারা নিজেরাই নিজেদের রাজাকার বলে স্নোগান দিয়েছে।
আজ (শুক্রবার) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সম্প্রতি চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার নিয়ে দেওয়া বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুষ্কৃতকারীদের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বিটিভির কার্যালয় ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করতে জনগণের সহায়তা চেয়ে সরকার প্রধান বলেন, যারা এই ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, আনাচে-কানাচে যেসব হামলাকারী লুকিয়ে আছে, তাদের খুঁজে বের করে সাজা নিশ্চিত করতে দেশের জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে। এই শত্রুদের খুঁজে বের করতে জনগণের সহযোগিতা চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়ত অতীতের মতোই অগ্নি সন্ত্রাস করেছে। এবার তারা আলাদা…। তারা গান পাউডার ব্যবহার করেছে। দেশের বাইরে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও মানুষের রুটি রুজি বন্ধের পাঁয়তারা করছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমার একটা কথা নিয়ে তারা কতদিন প্রতিবাদ করলো। কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে বিকৃত করা হয়েছিল। কোটা না মেধা…। তো আমাদের নারীর কোটা, প্রতিবন্ধীদের কোটা, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কোটা, জেলার কোটা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা; সেগুলো তো আমি বাতিলও করে দিয়েছিলাম। তারপরও কোটা না মেধা, মেধা না কোটা… তো কোটা আর মেধার মধ্যে এত তফাতের কী আছে? এখানে মেধায় তো (নিয়োগ) হয়।
বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের পদ্ধতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়, পরে লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে তাদের ভাইভা নেওয়া হয়। এরপর যখন পদায়ন করা হয়, যারা মেধাবী তারাই (নিয়োগ) পায়। অবশ্য এই কোটাগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়। তো এই কোটাগুলো যারা মেধাবী তারাই তো পাচ্ছে। সেইসূত্রে আমি বলেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা কি মেধাবী না? মেধাবী কি শুধু ওই রাজাকারের ছেলে-মেয়ে?
এ বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারের পর শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাতে বিক্ষোভ করে। সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকাল ৪টায় আমি প্রেস কনফারেন্স করি। কয়েকঘণ্টা চলে যায়। পরে রাতে ১১টা- সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে দেখলাম, অনেক ছেলে-মেয়ে হল থেকে বের হয়ে এসেছে। তাদের স্লোগানটা কী— তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; তোমার বাবা আমার বাবা, রাজাকার রাজাকার। তার মানে তারা নিজেদের রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিলো। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি। তারা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে সবার কাছে রাজাকার হিসেবে পরিচিত করলো।
শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানের প্রতিবাদ প্রত্যেকটি শ্রেণিপেশার মানুষ; এমনকি ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে শুরু করে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো পর্যন্ত করেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনও স্তরের মানুষ বাদ নেই যে, এর প্রতিবাদ না করেছে। তখন তারা তাদের স্লোগান পরিবর্তন করলো— চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেছি রাজাকার। রাজাকার তো আমি তোমাদের করিনি। তোমরা নিজেরাই স্লোগান দিয়ে তোমাদের রাজাকার করেছো। তোমরা স্লোগান দিয়েই তোমাদের পরিচয় দিয়েছো। তোমরা শুধু না, তোমরা রাজাকার, তোমাদের বাবা রাজাকার; এটা তোমরাই করেছো।
আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেই বের হয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইডেন মহিলা কলেজ হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা যেসব কামরায় থাকতো, সবগুলো ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে। তাদের রুমের সব কিছুতেই আগুন দেওয়া হয়েছে। তাদের সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিয়েছে। যখন আমাকে জানানো হলো, আমি ছাত্রলীগের নেতাদের বললাম— তোমরা হল থেকে বেরিয়ে আসো। কোনও ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। তারা কান্নাকাটি করে… আমাদের সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমি বলেছি সব পাওয়া যাবে। কিন্তু কোনও ঝামেলায় যাবে না। হল থেকে চলে আসো। তারা বেরিয়ে আসে।
শিক্ষার্থীরা যখন তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দেয়, তখনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই একদিনেই। এছাড়া তো তারা কোনও গণ্ডগোল করেনি। তারা সবসময় সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছে, সাহসিকতা দেখিয়েছে। এখন তাদের ওপর ক্ষোভ। যারা এই ধরনের (নাশকতা) ঘটনা ঘটালো, শিক্ষকের গায়ে হাত তুললো, ছাত্রদের মারলো, হলগুলো লুটপাট করলো, তাদের কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তর সালের ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী গণহত্যা যখন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোকেয়া হলের প্রায় ৩০০ মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করে। জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল….। মেয়েদেরকে রেপ করেছে, তুলে নিয়ে গেছে তাদের ক্যাম্পে। সেই ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর কী করেছে তারা! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলে নিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আবার সেই জায়গায় হল ভাঙা, শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা এমনকি নারী শিক্ষক, তাদেরও ছাড়েনি। ইডেনে মেয়েদের খাম্বার সঙ্গে বেঁধে তাদের উপরে অত্যাচার, তাদের নাকে খত দেওয়া, কান ধরে উঠবস করানো; এমন নানারকম জুলুম অত্যাচার করেছে। তাদের অপরাধ কী? তারা ছাত্রলীগ করে। এভাবে ছাত্রলীগের কোনও কামরা নেই যে, সেগুলো ভাঙচুর লুটপাট বা অগ্নিসংযোগ করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশটাকে নরক বানানোর চেষ্টা করা হলো। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি সেনাবাহিনী নামাতে। কারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করা, এটা আমাদের কর্তব্য। যার ফলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর