বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

লিড না পেলেও দুই উইকেট নিয়ে স্বস্তিতে দিন শেষ বাংলাদেশের

রিপোর্টার / ২৬ বার
আপডেট : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অল্পের জন্য লিড না পেলেও দুই উইকেট নিয়ে স্বস্তিতে দিন শেষ বাংলাদেশের, তৃতীয় দিন শেষে, ২১ রানে এগিয়ে পাকিস্তান। হাসান মাহমুদ দ্বিতীয় ইনিংসে তার প্রথম দুই ওভারে তুলে নিলেন পাকিস্তানের দুটি উইকেট। অল্পের জন্য লিড না পাওয়ার দুঃখ ভুলিয়ে দিলেন বাংলাদেশের পেসার। ৭ রানে আব্দুল্লাহ শফিককে ফিরিয়ে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর নাইটওয়াচম্যান খুররাম শাহজাদকে রাত পার করতে দেননি। তাকে শূন্যতে বোল্ড করেন হাসান। ৯ রানে ২ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ৩.৪ ওভার খেলে তারা ১২ রানের পাওয়া লিড বাড়িয়ে নিয়েছে ২১-এ।
ফুল লেংথের আউটসুইঙ্গার বল, আব্দুল্লাহ শফিক আলগা কাভার ড্রাইভ শট খেললেন। বল আউটসাইড এজ হয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়লো। হাসান মাহমুদ তার প্রথম ওভারেই পেয়ে গেলেন উইকেট। ৭ রানে ভাঙলো পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। শফিক মাত্র ৩ রান করেন।
নাহিদ রানাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সালমান আগা। আম্পায়ার আউট দেন। বাংলাদেশি ব্যাটার রিভিউ নিলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৬২ রানে। তাতে পাকিস্তানের চেয়ে ১২ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ হলো তাদের প্রথম ইনিংস। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের রেকর্ড জুটিতে লিডের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পেছনেই থাকতে হলো বাংলাদেশকে।
অবশ্য বাংলাদেশের দুর্দান্ত লড়াইয়ের প্রশংসা না করলে নয়। তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মিরাজ ও লিটন দলকে শুধু খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেননি, স্বপ্ন দেখিয়েছেন লিড নেওয়ার। দুজনের ১৬৫ রানের জুটি ছিল অবিশ্বাস্য। বাজে শট খেলে মিরাজ ৭৮ রানে থামলেও লিটন তার চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়ে যান চা বিরতির পর। হাসান মাহমুদের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। সালমান বল হাতে নিয়ে তাকে থামান ১৩৮ রানে। দুই বল পর শেষ উইকেটটিও তুলে নেন পাকিস্তানের খণ্ডকালীন স্পিনার।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ২৭৪ রান করেছিল। তাতে তারা লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করবে। খুররাম শাহজাদ সর্বোচ্চ ছয় উইকেট নেন, দুটি করে পান সালমান ও মীর হামজা।
বল হাতে নিয়ে সালমান আগা পেলেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ৭৯তম ওভারে থেমে গেলো লিটন দাসের দুর্দান্ত ইনিংস। ২২৮ বলে ১৩৮ রান করে প্যাভিলিয়নে গেছেন তিনি। লং অনে সাইম আইয়ুবের দারুণ ক্যাচে ভেঙে গেছে হাসান মাহমুদের সঙ্গে তার ৬৯ রানের জুটি। দলীয় ২৬২ রানে বিদায় নিলেন লিটন। চা বিরতির পর হাসান মাহমুদের কাছ থেকেও দারুণ সঙ্গ পেলেন লিটন দাস। দুজনের জুটি পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। দলীয় ১৯৩ রানে তাসকিন আহমেদ বিদায় নেওয়ার পর দুজনে ক্রিজে একত্রিত হন। দলীয় স্কোরও ২৫০ ছাড়িয়ে গেছে। ৬৫তম ওভারের পঞ্চম বলে চার মেরে লিটন দাস চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন। ১৭১ বলে ১১ চার ও ২ ছয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান বাংলাদেশি ব্যাটার।
ফলোঅনের শঙ্কাতেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই জায়গায় মিরাজ-লিটনের রেকর্ড জুটি তাদের উদ্ধার করেছে। প্রায় দুই সেশন স্বাগতিকদের ওপর কর্তৃত্ব করে আশার সঞ্চার করেছে। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে খুররামের বলে ভেঙেছে ১৬৫ রানের রেকর্ড এই জুটি। দলের স্কোর দুইশ’র কাছাকাছি নিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে ফিরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার পর পর অষ্টম উইকেট হিসেবে তাসকিন আহমেদের বিদায়ে আবারও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দল। এটিও শিকার করেছেন খুররাম। ইনিংসে এটি পাকিস্তানি পেসারের ষষ্ঠ উইকেট। একপ্রান্ত আগলে আছেন লিটন দাস। তার স্কোর ৮৩*। বাংলাদেশ এখনও ৮১ রানে পিছিয়ে।
২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়ানো যাবে সেই নিশ্চয়তাও ছিল না। ঠিক তখনই প্রায় দুই সেশন কর্তৃত্ব করে সুবিধাজনক জায়গায় যেতে বড় অবদান রাখে মিরাজ-লিটন জুটি। সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রান যোগ করেন তারা। চা বিরতির কাছাকাছি সময়ই এই জুটি ভেঙেছে মিরাজের বিদায়ে। মনোযোগ হারিয়ে ৫২তম ওভারে খুররাম শেহজাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৭৮ রানে আউট হয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে ফিরেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন মিরাজ-লিটন। দ্রুতই রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন তারা। দেখতে দেখতে স্কোরটাকেও দুইশর কাছেও নিয়ে আসেন। দলের ১৯১ রানের সময় অবশ্য আর শেষ রক্ষা হয়নি। তার আগে অবশ্য রেকর্ড গড়েছে এই জুটি। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চাশ রানের আগে ৬ উইকেট হারানোর পর এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
২৬ রানে পড়েছিল ৬ উইকেট। তখনকার নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের হাতে থাকলেও তার পর থেকে কর্তৃত্ব করেছে লিটন-মিরাজ জুটি। সপ্তম উইকেটে যে জুটি দ্বিতীয় সেশনে দেড়শ রান ছাড়িয়েছে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দুজনেই স্কোরবোর্ডে রান যোগ করছেন। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের সঙ্গে কমিয়ে আনছেন ব্যবধান।
২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ছিল ফলোঅনের পড়ার শঙ্কা। ঠিক তখনই কঠিন চাপের সময় সপ্তম উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন মিরাজ-লিটন। লাঞ্চ থেকে ফিরেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং একশ রান পূরণ করেছে এই জুটি। তাদের ব্যাটে ফলোঅনও এড়ানো গেছে। ফলোঅন এড়াতে প্রয়োজন ছিল ১২৫ রান। ৩৬তম ওভারে সেটাই করে দেখিয়েছেন তারা।
তাছাড়া বিরল কীর্তিও গড়েছেন দুজন। টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে ১০০ প্লাস রানের জুটির মাত্র তৃতীয় নজির এটি। ফলোঅন এড়ানোর পর দুজনে ফিফটিও তুলে নিয়েছেন। লিটন পেয়েছেন ১৮তম হাফসেঞ্চুরি। মিরাজ পেয়েছেন অষ্টম।
তৃতীয় দিন সকালে ব্যাটারদের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। বিনা উইকেটে ১০ রানে মাঠে নামার পর লক্ষ্য ছিল লিড নেওয়ার। কিন্তু নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে প্রথম ঘণ্টাতেই বাংলাদেশকে ধ্বসংস্তূপে পরিণত করেন পাকিস্তানের দুই পেসার মির হামজা ও খুররাম শাহজাদ। তাদের আঘাতে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় পুরোপুরি। তাতে ফলোঅনে পড়ার শঙ্কাও জাগে। তার পর অবশ্য শেষ ঘণ্টাতে সপ্তম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে খেলেছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮৯ বলে ৪৯ রানের এই জুটিতে সফরকারীরা এখন ফলোঅন এড়ানোর আশা নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে গেছে। বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোর ৬ উইকেটে ৭৫। ফলোঅন এড়াতে আর প্রয়োজন ৫০ রান। তবে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে ১৯৯ রানে। এই সেশনে ২৪ ওভারের খেলা হয়েছে। ৬৫ রানে পড়েছে ৬ উইকেট।
পাকিস্তানের পেস বোলিংয়ে প্রথম ঘণ্টাতেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে সাকিব আল হাসানও ব্যতিক্রম কিছু করতে পারেননি। খুররাম শেহজাদের বলে এলবিডাব্লিউতে ২ রানে ফিরেছেন। সাকিব রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলের সুবাদে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। তাতে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে গেছে সফরকারী দল।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই ব্যাট হাতে ধুঁকলো বাংলাদেশ। সেই বিপদ থেকে গত টেস্টের নায়ক মুশফিকুর রহিমও উদ্ধার করতে পারেননি। দ্রুত ৪ উইকেট পতনের পর তিনি প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন। মির হামজার বলে খোঁচা মেরে গ্লাভস বন্দি হয়েছেন ৩ রানে। আগের ওভারে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ বিপদ সামলাবে কী? তারা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে মুমিনুল হকের বিদায়ে। নবম ওভারে মির হামজার প্রথম বলে তুলে দেন ক্যাচ। তাতে ২০ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। মুমিনুল ফেরার আগে ১ রান করেছেন।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। জাকিরের আউটের পর অষ্টম ওভারেই জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছেন পেসার খুররাম শেহজাদ। প্রথম বলে ওপেনার সাদমানকে বোল্ড করেছেন। বল কিছুটা ভেতরে ঢুকেছিল। কিন্তু সাদমান আগেই অফস্টাম্পের দিকে সরে আসেন। তাতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। ফেরার আগে করেন ১০ রান। চতুর্থ ডেলিভারিতে ফুলার লেংথের বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শান্তও (৪)। তাতে ২০ রানের মধ্যে পড়েছে তৃতীয় উইকেট। দ্বিতীয় দিন বিনা উইকেটে শেষ করলেও তৃতীয় দিনের শুরুতেই নড়বড়ে ব্যাটিংয়ের মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ। সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার জাকির হাসান।
দিনের তৃতীয় ওভারেই মির হামজার বলে জাকির হোসেনের ক্যাচ উঠেছিল। ভাগ্য ভালো সেটি আবরারের হাতে পড়ার আগেই ড্রপ খায় মাটিতে। তারা ক্যাচের আবেদন করলেও রিপ্লেতে দেখা গেছে ক্যাচ ছিল না সেটা। একই ওভারের পঞ্চম বলে এবার লেগ বিফোরের আবেদন। ব্যাটার আবারও জাকির। ভাগ্য সহায় আবারও। আম্পায়ার সাড়া না দিলে পাকিস্তান রিভিউ নেওয়ার পথে হাঁটেনি। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে, রিভিউ নিলে নির্ঘাত এলবিডাব্লিউ হতেন বাংলাদেশের ওপেনার। তবে পরের ওভারে আর শেষ রক্ষা হয়নি। খুররাম শাহজাদের বলে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন জাকির। এবার আর আবরার ক্যাচ নিতে কোনও ভুল করেননি। জাকির ১ রানে ফিরেছেন।
পাকিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে বেঁধে ফেলার পর এখন ব্যাটারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ। লক্ষ্য লিড নেওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া।
বিনা উইকেটে ১০ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা তারা শেষ করেছিল। স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১০ রান। সেই স্কোর নিয়েই তৃতীয় দিন সফরকারীরা শুরু করেছে। বৃষ্টির কারণে প্রথম দিন ভেসে গেছে।
পাকিস্তানকে অলআউট করার সন্তুষ্টি পেলেও বাংলাদেশ চারটি ক্যাচ ফেলে দেওয়ার মাশুল গুণেছে। বিশেষ করে আগা সালমানকে ফেরাতে না পারায় স্বাগতিকরা শোভনীয় স্কোর জমা করেছে বোর্ডে। রানের খাতা না খুলে জীবন পাওয়া পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ৫৪ রান করেন। এছাড়া সাইম আইয়ুব সর্বোচ্চ ৫৮ ও শান মাসুদ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন।
গতদিনটা বেশি স্মরণীয় করে রেখেছিলেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। দশমবার পাঁচ উইকেট নিয়ে দিনটা রাঙিয়েছেন তিনি। ১৪ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা তাসকিন আহমেদও রাঙিয়েছেন ৩ উইকেট শিকারে।
স্কোর: পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৮৬.১ ওভারে ২৭৪/১০ (মীর হামজা ০*, আগা সালমান ৫৪, আবরার ৯, আলী ২, খুররাম শাহজাদ ১২, বাবর আজম ৩১, মোহাম্মদ রিজওয়ান ২৯, আব্দুল্লাহ ০, শান মাসুদ ৫৭, সাইম আইয়ুব ৫৮, সৌদ শাকিল ১৬)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৮.৪ ওভারে ২৬২/১০ (হাসান ১৩*; নাহিদ ০, লিটন ১৩৮, জাকির ১, সাদমান ১০, শান্ত ৪, মুমিনুল ১, মুশফিক ৩, সাকিব ২, মিরাজ ৭৮, তাসকিন ১)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৩.৪ ওভারে ৯/২ (সাইম ৬*, খুররাম ০, শফিক ৩)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর