রেলপথে চাপ বেড়েছে, কয়েকটি ট্রেন বিলম্বিত

ঈদ উপলক্ষে যে পাঁচ দিনের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে তার শেষ দিন আজ। রেলপথে গত চার দিনের তুলনায় শেষদিনে ঘরমুখো মানুষের চাপ কিছুটা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও আগে টিকিট সংগ্রহকারীরাই ট্রেনে ভ্রমণ করছেন, তবে শেষ সময়ে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার (১ মে) সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে বেশ কিছু ট্রেন। বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনগুলোতে ছিল যাত্রীর চাপ। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, বড় কোনোধরনের শিডিউল বিপর্যয় এখনও হয়নি। তবে সকাল থেকে তিনটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়েছে। এছাড়া একতা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা, তিতাস ও কমিউটারসহ বিভিন্ন ট্রেন নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে সোয়া ৭টায়। চিলাহাটি নীলসাগর এক্সপ্রেস ৬টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়েছে ৭টা ৪৫ মিনিটে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও বিলম্বিত হয়ে তা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যায় ৮টা ৫০ মিনিটে।
সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের উঠতে দেখা গেছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং রেলওয়ে পুলিশ যাত্রীদের ছাদ থেকে নামার কথা বললেও যাত্রীরা নামেনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ছাদে উঠছেন। ঝুঁকি নিয়ে ছাদে কেন ভ্রমণ করছেন, জানতে চাইলে একেকজন একেক ধরনের যুক্তি দেখাচ্ছেন। ভেতরে লোকজনের ভিড়, গরম বেশি; আর ছাদে বাতাস লাগবে, কোনও ধাক্কাধাক্কি নেই— এমন যুক্তিও দেখাচ্ছেন কেউ কেউ।
শেষদিনে সকালে যাত্রীদের বেশিরভাগই কিছুটা আগে-ভাগেই স্টেশনে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। নিজেদের নির্দিষ্ট ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়ে আসন খুঁজে বসার চেষ্টা করছেন সবাই। টিকিট খোঁজার দৌড়ে সফল হলেও গরমের তীব্রতা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে যাত্রীদের জন্য। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের এতে ভুগতে হচ্ছে বেশি।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসের যাত্রী রোকসানা বেগম বলেন, সকাল থেকে এসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেছি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ট্রেন ছাড়ছে। তারপরও ভালো যে, খুব বেশি দেরি হয়নি। এখন ঠিক মতো পৌঁছাতে পারলেই হয়।
আরেক যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ভেতরে তো অনেকটাই গরম। তারপর আবার যাত্রী সংখ্যা বেশি। ট্রেন ছাড়লে কিছুটা বাতাস পাওয়া যাবে। বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনদের মুখ দেখলে এই কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
রাফায়াত নামে আরেক যুবক জানালেন, ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য প্রায় সাত থেকে আট ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। অনলাইনে চেষ্টা করে টিকিট পাননি তিনি, তারপর সংগ্রহ করেছেন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। তিনি বলেন, ‘ট্রেন কিছুটা বিলম্বিত। কিছুক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দেবে। তারপরও ভালো লাগছে যে, অন্যান্য বছরের মতো হয়নি।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, করোনা মহামারি কাটিয়ে দুই বছর পর সবাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যাচ্ছেন। যারা ট্রেনে ভ্রমণ করছেন, তাদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ট্রেনের বড় কোনও সিডিউল বিপর্যয় হয়নি।’
সকাল থেকে তিনটি ট্রেন কিছুটা বিলম্বিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে দূরের গন্তব্য, অন্যদিকে প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী চাপ থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ের বেশিক্ষণ স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, এতে সময় লেগে যায়। আর সে কারণেই ট্রেনগুলো ছেড়ে যেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’