সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

রিজার্ভ কখনোই ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬৮ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। এমনকি আগামী বছরজুড়ে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়নের বেশিই থাকবে। দুই বছর পর ঋণ পরিশোধ জনিত চাপে রিজার্ভ কিছুটা নামলেও ভবিষ্যতে কখনোই তা ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এ তথ্য।

শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ ও করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উদ্যোগের সুফল এরইমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা আশা করছেন, উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে কখনোই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। দেশের আমদানি ব্যয়, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক ঋণ, ঋণের কিস্তি ও বৈদেশিক অনুদানসহ রিজার্ভের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা করছেন র্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি থাকবে। ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। গত জুলাইতে ভালো রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া, যেভাবে রফতানি আয় আসছে, সেই ধারা ঠিক থাকলে কোনও সমস্যা হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২৩ ও ২০২৪ সালজুড়ে ৩৮ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রিজার্ভ থাকবে। এমনকি ২০২৫ ও ২০২৬ সালের দিকে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের কিছুটা চাপ থাকবে, কিন্তু তখনও রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকবে।

এদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে সামঞ্জস্য ফেরাতে চলতি অর্থবছর ২০ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বেড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বেশ খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১২ শতাংশ বেড়েছে। আগস্টেও রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে এলসি খোলা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের। এ সময়ে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স খাতে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। সেই হিসাবে জুলাইয়ে ব্যয়ের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে চলতি আগস্টেও। আগস্টের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসীরা ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিলাসবহুল পণ্যসহ ২৭ ধরনের পণ্যে শতভাগ মার্জিন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে কমেছে আমদানির এলসি। যার প্রভাব পড়ছে ডলারের বাজারে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। রফতানি আয়ও ভালো। সব মিলিয়ে অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। এতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। বর্তমান যে সংকট, তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম কমতে শুরু করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ কোনও সংকটময় পরিস্থিতিতে নেই বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) এক অনলাইন সভায় বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে আইএমএফ-এর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক ডিপার্টমেন্টের ডিভিশন চিফ রাহুল আনন্দ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলক অল্প—জিডিপির ১৪ শতাংশের মতো।

এদিকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। ঋণপত্র খোলার হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিষ্পত্তির হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলারের। যা জুনের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলার কম। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। জুন থেকে জুলাইয়ে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ। জুনে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে ১১৭ কোটি ডলার কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৫৮ কোটিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ে আমদানি ব্যয় ২ বিলিয়ন ডলার কমার পর আগস্টেও এলসি খোলা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১১ দিনে দেশে এলসি খোলা হয়েছে ১৬১ কোটি ডলারের। জুলাইয়ের প্রথম ১১ দিনে ২৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। সে হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টের প্রথম ১১ দিনে এলসি খোলা কমেছে ৯৪ কোটি ডলারের।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। রেকর্ড সৃষ্টি করা এ আমদানি ব্যয়ের প্রভাবে ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতায় সুফল আসতে শুরু করেছে। কমতে শুরু করেছে ডলারের দাম।

বুধবার (১৭ আগস্ট) কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) ডলারের দাম ১১৪ টাকায় নেমে এসেছে। এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবারও এক ডলার কিন‌তে গ্রাহক‌দের গুনতে হ‌য়েছিল ১১৮ থে‌কে ১২০ টাকা।

যেসব কারণে কমবে না রিজার্ভ

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, সামনের দিনগুলোতে আমদানি ব্যয় আর বাড়বে না। রফতানি আয় যেমন আছে প্রায় তেমনই থাকবে। সামান্য কিছু বাড়তে পারে, তবে কমবে না। তবে বৈদেশিক ঋণের কিস্তির পরিমাণ এক বছর পর বাড়বে ২ বিলিয়ন ডলার। একইসঙ্গে আবার দুই বিলিয়ন ডলারের এফডিআই (বিদেশি বিনিয়োগ) আসবে। এতে ঘাটতি হবে না। এছাড়া বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম কমছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে খাদ্যপণ্য আসছে।

মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, চলতি অর্থবছরে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৩ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বাড়বে ১২ শতাংশ। রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং তা ১৫ শতাংশ বাড়বে। আবার, সাধারণত প্রতিমাসে গড়ে দুই বিলিয়ন ডলারের কম রেমিট্যান্স আসে। ঈদের আগে কোনও কোনও মাসে দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বেড়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে আগামী বছর থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, তখন মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিমাসে গড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়। এটি বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পণ্যের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি বাড়ছে। তাই আশা করা হচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যেই মাসে রফতানি আয় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।

তৃতীয়ত, আমদানি ব্যয় কমছে। এতদিন গড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়েছে আমদানিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের নানামুখী উদ্যোগে আগামী মাস থেকেই খরচ ৫ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসবে। ডিসেম্বর নাগাদ নামবে ৪ বিলিয়ন ডলারে।

চতুর্থত, আইএমএফসহ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ পাওয়া যাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং থেকেও রেমিট্যান্স আসছে। ফ্রিল্যান্সিং জনপ্রিয় করতে চান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে তাদের আইডি কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এলে আইটি খাতে বিপ্লব ঘটবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর