মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

যে কোনো সময় বাসায় ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

রিপোর্টার / ১৩ বার
আপডেট : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪

এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে। তাই যে কোন সময় তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
৮ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে কিছুদিন তাঁর শারীরিক অবস্থার কখনও অবনতি ও কখনও উন্নতি হয়। তাই তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বাসায়ও নিতে পারেননি স্বজনরা। এক পর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নেতিবাচক গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে তাঁর চিকিৎসক বোর্ডের তৎপরতা জোরদার করা হয়। এর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। তাই এখন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
৭৯ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থারাইটিস ও ডায়াবেটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পরিপাকতন্ত্র ও চোখের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। এ কারণে ক’দিন পর পর তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।
২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ ক’বার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। করোনাক্রান্ত হয়ে ওইবছর ১৫ এপ্রিল এক ঘন্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় ওইদিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন।
১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভার কেয়ার হাসপাতালে তাঁর বায়োপসি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭দিন চিকিৎসা নেয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেন ওইবছর ৭ নবেম্বর। এরপর ১৩ নবেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া।
২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান খালেদা জিয়া। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। ১০ জুন রাত সোয়া ৩টায় বুকের ব্যথা নিয়ে চতুর্থ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ১১ জুন এনজিওগ্রামের পর তাঁর হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়লে ওইদিনই একটি ব্লকে রিং পরানো হয়।
পরদিন দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তাঁর হৃদপিন্ডে ৩টি ব্লক পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর ক’দিন পর তাঁকে কেবিনে নেয়া হয়। কেবিনে রেখেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চালায় মেডিকেল বোর্ড। এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ২৪ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে পরীক্ষা শেষে রাতেই আবার বাসায় ফেরেন তিনি। এর পাঁচ দিন পর ২৭ আগষ্ট আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ৩১ আগষ্ট তিনি বাসায় ফিরেন।
২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার পর তিনি গুলশানের বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে ওইদিন রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে ৬ দিন চিকিৎসার পর ৪ মে আবার তিনি গুলশানের বাসায় চলে যান। এরপর আবারও ১৩ জুন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫ দিন চিকিৎসা শেষে ১৭ জুন বাসায় ফিরেন। ৫৩ দিন পর ৯ আগষ্ট আবারও চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিনই হাসপাতালে ভর্তি হন। ৫ মাস ২ দিন পর এ বছর ১১ জানুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন।
এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেদিনই তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজা’য় ফিরেন। এর পর ১৩ মার্চ এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। একদিন পর ১৪ মার্চ তিনি বাসায় ফিরেন। ৩০ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায় আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে ২ এপ্রিল বাসায় ফিরেন তিনি। এর পর ১ মে সন্ধ্যায় এভারকেয়ংার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ২ মে রাতে তিনি বাসায় ফিরেন।
২১ জুন গভীর রাতে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ২ জুলাই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। ২৩ জুন তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। সর্বশেষ ৮ জুলাই খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
উল্লেখ্য, ৬ জুলাই মুক্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। মুক্তি পেলেও তিনি হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর আবারও পুলিশ এসকর্ট দেয়া হয়েছে তাকে। এ ছাড়া তাঁর নিরাপত্তায় রয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনী সিএসএফ। এই টিমে বেশ ক’জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। সিএসএফ ও পুলিশ এসকর্ট তাঁর বাসায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে জোরদার হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর