শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
অভিনয়শিল্পী সংঘের অন্তর্বর্তী প্রধান তারিক আনাম খান নতুন পথে বাংলাদেশ, সংস্কারে দীর্ঘ পথ: দ্য গার্ডিয়ান সব স্থানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হয়নি: মির্জা ফখরুল সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ শুরু অক্টোবরে, রিপোর্ট ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা নয়: আসিফ নজরুল শেখ হাসিনার ভারতে থাকা উচিত: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এস আলম গ্রুপের তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার চিঠি অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চালকের আসনে ভারত সংস্কার কমিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় প্রেসক্লাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের মাধ্যমে সদস্য পদ দেয়া হয়েছে: শওকত মাহমুদ

মারধরের শিকার শামসুদ্দিন মানিক, খোয়ালেন নগদ টাকা-পাসপোর্ট

রিপোর্টার / ৭ বার
আপডেট : শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ভারতের সীমান্তের মধ্যেই মারধর করেছে দালাল চক্র। এ সময় ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট।
দালালদের সঙ্গে জড়িত আছেন এক মাঝিও। যে কিনা নদীপথে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পার করে দিয়েছিল। সাবেক এই বিচারপতির আটক হওয়ার সময়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কথা বলার সময় তাকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখা গেছে।
এদিকে, শনিবার (২৪ আগস্ট) ভোরে সাবেক বিচারপতি মানিককে কানাইঘাট থানায় হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাবেক বিচারপতিকে কোনও মামলা ছাড়াই বিজিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে এখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
প্রকাশ হওয়া ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেবো। আমার ভাইবোন দেবে না, আমি দেবো। আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেবো।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘ওই ফালতু লোক (দালাল) দুইটারে আইনো না। আমি এই দেশে (ভারত) এত কষ্ট কইরা আইছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?’
এদিকে, বিজিবি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক বিচারপতি মানিকের গলায় একটি গামছা, যেটা ধরে রেখেছেন একজন বিজিবি সদস্য। তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাড়ি কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাড়ি মুন্সীগঞ্জ।’ নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার নাম বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।’ এ সময় বিজিবির এক সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন, আপনে ইন্ডিয়া (ভারত) পালাইতাছেন কেন? উত্তরে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ভয়ে পালাইতেছি।’ কার ভয়ে? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ভয়ে।’
সঙ্গে সঙ্গে কী কী ছিল জানতে চাইলে শামসুদ্দিন মানিক জানান, তার সঙ্গে ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশের পাসপোর্ট, টাকা আর কয়েকটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। আরেক প্রশ্নে তিনি জানান, শুক্রবার আটক হওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিল ৪০ হাজার টাকা।
বিজিবি সদস্য তখন প্রশ্ন করেন, কালকে যে দুজন টাকা নিছে, ওদের কাছে কত টাকা ছিল? জবাবে মানিক বলেন, ‘ওরা নিছে ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো।’ বিজিবির ওই সদস্য জানতে চান, ওনাদের (দালাল) ফোন নম্বর আছে আপনার কাছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘না কিচ্ছু নাই, আমার ফোন নম্বর টোন নম্বর সব নিয়ে গেছে।
কত টাকা চুক্তিতে এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ‘আমি ১৫ হাজার টাকা ওদের বলছিলাম। ওইটা আমি দিছি। কিন্তু পরে এই দুই ছেলে (দালাল) আমারে মাইরা-ধইরা সব টাকা নিয়ে গেছে। আমাকে তারা ইন্ডিয়ার (ভারত) ভেতরে মারধর করে সব নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত বিচারপতি হচ্ছেন এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকাকালে তার নানা কর্মকাণ্ড আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনকি ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার পরও আলোচিত ছিলেন বিচারপতি মানিক। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের বেঞ্চেও তিনি ছিলেন অনন্য। রায়ে কেবল তিনিই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন।
বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায় সব সময়ই আলোচনায় ছিলেন বিচারপতি মানিক। অবসরে যাওয়ার পরও ১৬১টি মামলায় রায় লেখা বাকি ছিল তার। এ নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান মানিক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু মামলায় বিতর্কিত রায় দেন তিনি। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশোতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা অশালীন মন্তব্য করেন সাবেক এই বিচারপতি।
দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারকাজ চালিয়ে গেছেন শামসুদ্দিন মানিক। দেশের কোনও আইনকানুনের তোয়াক্কা করেননি তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বিচারপতি মানিক দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, যাকে ইচ্ছা তাকে নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। মনি-লন্ডারিং, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ভঙ্গ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদের হিসাব গোপন এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের শপথ ও আচরণবিধি ভঙ্গের মতো অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ চ্যানেল আইয়ের একটি টকশোতে হাজির হয়ে উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেন তিনি। এ নিয়ে আইনি নোটিশ গেলে ওই উপস্থাপিকার কাছে ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে’ ক্ষমা চান সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর