যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা

একটি সমাবেশে বক্তৃতার সময় শনিবার (১৩ জুলাই) সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষবস্তু করে গুলি চালানো হয়েছিল। এই ঘটনাকে তদন্তকারীরা একটি সম্ভাব্য হত্যার প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছেন। তিনি ছাড়াও এর আগে আমেরিকার বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হামলার শিকার হয়েছেনে। আব্রাহাম লিংকন এবং জেএফকেসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জড়িত উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির আলোকে এই প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটনের হিলটন হোটেলে একটি ইভেন্ট শেষে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আক্রমণকারী ছিলেন জন হিঙ্কলে জুনিয়র। তাকে ২০২১ সালে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।
রিগান টানা ১২ দিন হাসপাতালে ছিলেন। ঘটনাটি মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। কেননা, এমন একটি ঘটনার শিকার হয়েও চিকিৎসা চলাকলীন তিনি বেশ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি পৃথক হামলার শিকার হয়েছিলেন। হামলাগুলো পরিচালনা করেছিলেন নারীরা। আর এই দুই হামলার ব্যবধান ছিল মাত্র ১৭ দিন। তবে উভয় হত্যা প্রচেষ্টায় অক্ষত ছিলেন জেরাফ।
১৯৭২ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের জন্য প্রচারকাজ করছিলেন জর্জ ওয়ালেস। এসময় মেরিল্যান্ডের লরেলের একটি শপিং সেন্টারে তাকে চারবার গুলি করা হয়। এই ঘটনায় আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান তিনি।
ওয়ালেস তার বিচ্ছিন্নতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং জনতাবাদী আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাকে হত্যার প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের যুগে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই রবার্ট ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তখন ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের অ্যাম্বাসেডর হোটেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডটি নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যার মাত্র দুই মাস পরে ঘটেছিল। এই ঘটনা ১৯৬৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং এটি ১৯৬০’র দশকের শেষদিকের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে প্রতিফলিত করে।
১৯৬৩ সালের নভেম্বরে টেক্সাসের ডালাসের স্ত্রী জ্যাকির সঙ্গে মোটরক্যাডে চড়ার সময় প্রেসিডেন্ট কেনেডি লি হার্ভে অসওয়াল্ডের গুলিতে নিহত হন।
১৯৬৪ সালে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী ওয়ারেন কমিশন এই উপসংহারে পৌঁছান, লি হার্ভে অসওয়াল্ড একাই এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছিলেন। পেশায় তিনি একজন সাবেক সামুদ্রিক ছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করতেন। অনেক আমেরিকান মনে করেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং নাগরিক অধিকার সংগ্রামের পটভূমিতে জেএফকে’র মৃত্যু মার্কিন রাজনীতি ও সমাজে আরও অস্থির সময়ের সূত্রপাত করেছিল।
১৯৩৩ সালে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট মিয়ামি ফ্লোরিডায় একটি হত্যা প্রচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন। ওই হামলায় তিনি অক্ষত থাকলেও শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাক নিহত হন।
ট্রাম্পের মতো টেডি রুজভেল্টও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ১৯১২ সালে উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে তাকে গুলি করা হয়েছিল।
বুলেটটি সারাজীবন রুজভেল্টের বুকে আটকে যায়। তার বুক পকেটে ৫০ পৃষ্ঠার একটি বক্তৃতা ভাজ করে রাখায় এবং একটি ধাতুর সানগ্লাস থাকায় বুলেটটির গতি ধীর হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রুজভেল্ট তার বক্তৃতা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯০১ সালে নিউইয়র্কের বাফেলোতে লিওন কলসের গুলিতে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলে নিহত হন। ১৮৬৫ সালে ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকটি দেখার সময় জন উইলকেস বুথের গুলিতে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নিহত হন। উইলকেস একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন।