বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

মুরগির দ্বিগুণ দাম শিম-কাঁচামরিচের, ক্রেতাদের হাঁসফাঁস

রিপোর্টার / ০ বার
আপডেট : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। তবে তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে শিম, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা; এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া টমেটো প্রতি কেজি ২৬০, বেগুনের কেজি ১৮০ টাকা। অন্যান্য প্রায় সবজির দামই শতকের ঘর ছাড়িয়েছে। সবজির বাজারের এই উচ্চাবস্থানে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ মানুষ। সবজির দাম মাত্রাতিরিক্ত। সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। কিন্তু সবজির বাজার সেই সীমা লঙ্ঘন করছে। এভাবে চলতে দেওয়া উচিত না।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম। বেশিরভাগ সবজিই ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে।
আজ মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করতে আসেন সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুন। তার নেতৃত্বে ডিম, মাংস, মুদি দোকানে অভিযান চললেও সবজির বাজারে চলেনি অভিযান, এমন তথ্য জানিয়েছেন বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহ আলম। সবজির অতিরিক্ত দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিকাংশ বিক্রেতাই দোহাই দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গের বন্যার।
আজকের কাঁচাবাজারে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে শিম, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা; প্রতিটিই বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া অন্যান্য সবজির মধ্যে ভারতীয় টমেটো ২৬০ টাকা, দেশি গাজর ১৫০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন (তালবেগুন) ১৮০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ৮০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৯০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ও চাল কুমড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৫০ টাকা, আর লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় প্রায় সব সবজির দাম শতকের ঘর ছাড়িয়েছে। তবে কেবল শতকের ঘরই ছাড়ায়নি, শতক পেরিয়েও লাফিয়ে বেড়েছে বেশ কিছু সবজির দাম। গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। ভারতীয় টমেটো ও কাঁচামরিচের দাম এক লাফে প্রতি কেজিতে বেড়েছে যথাক্রমে ৯০ ও ৮০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে দেশি গাজর, পেঁপে, চিচিঙ্গার দাম। আর হালিতে ১০ টাকা বেড়েছে কাঁচা কলার দাম। আবার প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়েছে লম্বা বেগুন, কালো গোল বেগুন, ঢেঁড়স, পটল, ধুন্দল ও বরবটির। চাল কুমড়ার দামও বেড়েছে প্রতি পিসে প্রায় ১০-২০ টাকা। অবশ্য কচুরমুখীর দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকা। আর অন্যান্য সবজির দাম উচ্চাবস্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির এই অতিরিক্ত দাম নিয়ে বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, আমাদের দেশে মূলত সবজি উত্তরবঙ্গেই বেশি হয়। সেদিকে বন্যা হওয়ায় বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। ওদিকে সবজি চাষে সমস্যা হলে বাজারে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে। এখনও সেটাই হচ্ছে। বন্যা-বৃষ্টি কমলে সবজির দাম কমে আসবে বলে ধারণা করছি। আরেক বিক্রেতা বলেন, শিমের কেজি ৪০০ টাকা। এটা সত্যিই অনেক বেশি। এই সময়ে এই দাম থাকার কথা না। কিছুদিন আগেও আমরা ১৫০-২০০ টাকায় শিম বিক্রি করেছি। কিন্তু আজকে এতো বাড়লো যে মানুষ কিনতে পারছে না।
বাজারে সবজির অতিরিক্ত দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও। বাজার করতে আসা মাহফুজুর রহমান নামে একজন বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। সবজির দামতো অত্যধিক। সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। সবজির দাম সেই সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে। এভাবে আমরা চলতে পারি না। এর দ্রুত সমাধান দরকার। আরেক ক্রেতা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনও সমাধান নাই। আজ দেখলাম বাজার মনিটরিংয়ে এসেছে। এটা নিয়মিত চললে হয়তো কাজ হবে। এদিকে সরকারের জোর দেওয়া উচিত।
এদিকে আজকের বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এরমধ্যে ছোট পেঁয়াজ ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি একই দামে। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৬৫ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২১০-২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০-৩০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা এবং মানভেদে চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
আজকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে। আর বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৫৫-১৬০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৬০ টাকা দরে প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৬৮-২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০-৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির লাল ডিম কয়েকটি দোকানে গত সপ্তাহের থেকে ৫ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া সাদা ডিমের দাম রয়েছে আগের মতোই। আর ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫-৮ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ২৩-২৫ টাকা করে কেজিতে। এছাড়া প্রতি কেজিতে লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা।
এদিকে এই বাজারে ডিমের দোকানগুলোতে অন্যান্য সময়ের মতো ডিম দেখা যায়নি। কয়েকটি দোকান বন্ধও দেখা যায়। বিক্রেতারা বলছেন, তারা ডিম পাচ্ছেন না বলে আনছেন না। যারা আনতে পেরেছেন সেটাও সংখ্যায় অনেক কম বলছেন। এসময় বাজার করতে আসা এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ডিম নাই। মুরগি কী ডিম পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে? তাতো না। তাহলে ডিম নাই কেন? আমরা তো ভোগান্তিতে পড়ছি। আর মুরগির দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, মুরগির খাদ্যের দাম বেশি। তাই মুরগির দাম কমছে না।
এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী, ১৮০০-২৩০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০- ৫০০ টাকা, কাতলা মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০- ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০- ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাজলী মাছ ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আজকে বাজারে ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাশকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৮৫ টাকা, ছোলা ১৩০টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বুটের ডালের ও ডাবলির দাম বেড়েছে ৫ টাকা। মাশকলাই ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ৬ টাকা।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুন। তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়। ডিম, মুরগী, পেঁয়াজসহ শুরু করে অন্যান্য কাঁচামালের বাজার মনিটরিং করার চেষ্টা করছি। ডিমের ক্ষেত্রে সামনের দিকে আমরা যে চ্যালেঞ্জটা দেখতে পাচ্ছি সেজন্য আমরা বাজারে গিয়ে ডিমের মূল্য যাচাই করছি। কিন্তু ডিম ক্রয়ের যে রসিদ রয়েছে, তারা সে রসিদটা দেখাতে পারছে না। যে দোকানদাররা কোনও রশিদই দেখাতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর যারা দুয়েকটা রসিদ দেখাতে পেরেছে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুন গণমাধ্যমে বলেন, আমরা মুরগির মাংসের দুটো দোকানেও জরিমানা করেছি। তারা মূল্য তালিকা রাখেনি এবং ক্রয়ের রসিদ দেখাতে পারেনি। আমরা অনলাইনে টিসিবির পণ্যের দাম দেখিয়ে থাকি। সেখানে দেখলে বোঝা যায়, গত ৭ তারিখের পর থেকে কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। তারপরও বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স সক্রিয় হলে আরও ভালো হবে।
ডিম ও মুরগির দাম কমাতে মুরগির খাবারের দাম কমানোর কথা উল্লেখ করে ফুয়ারা খাতুন বলেন, বলা হচ্ছে মুরগির খাবার বা ফিডের দাম বাড়াতে মুরগী বা ডিমের দাম বাড়ছে। সে ব্যাপারে কীভাবে ফিডের দাম কমানো যায় চেষ্টা করা হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ফিডের দাম কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, বাজার মনিটরিংয়ের সময় ক্রয়ের রসিদ দেখাতে না পারায় মিরপুর চিকেন হাউজের দোকানদারকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এবং ফ্রেশ কাট চিকেন সার্ভিসের দোকানদারকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং ক্রয়ের রসিদ দেখাতে পারার কারণে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর