মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহুর একাধিক মিথ্যা দাবি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে গাজায় চলমান ইসরায়েলের যুদ্ধের পক্ষে সাফাই গেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন চেয়েছেন এবং বিক্ষোভকারীদের উপহাস করেছেন। তিনি একটি অপ্রমাণিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন এবং গাজায় কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরও সমালোচনাকে উপেক্ষা করেছেন।
নেতানিয়াহুর দাবিগুলো বাস্তবতার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ:
দাবি: আপনারা যেসব মিথ্যা শুনেছেন তা সত্ত্বেও গাজার যুদ্ধে যোদ্ধা ও বেসামরিকদের মৃত্যুর হার শহুরে যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে কম।
বাস্তবতা: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিহতদের মধ্যে সবাই যোদ্ধা ছিলেন না। ইসরায়েল বেসামরিক নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য হামাসকে দায়ী করলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়। অনেক মৃত এখনও ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে আছেন বা সাময়িক কবরস্থানে সমাহিত হয়েছে।
দাবি: আমি আপনাদের কর্নেল জন স্পেন্সারের কথা শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল বেসামরিক ক্ষতি প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
বাস্তবতা: জন স্পেন্সার একজন সামরিক বিশ্লেষক, যিনি ইসরায়েলপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন। তার বিশ্লেষণগুলো অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি বাইডেন প্রশাসনও ইসরায়েলকে বেসামরিক ক্ষতি কমানোর জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দাবি: যদি গাজার ফিলিস্তিনিরা যথেষ্ট খাবার না পেয়ে থাকে, তবে তা ইসরায়েলের কারণে নয়, হামাসের চুরির কারণে।
বাস্তবতা: জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের দ্বারা মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি এবং হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এপ্রিলে একটি ত্রাণ বহরের ওপর হামলায় সাতজন কর্মী নিহত হন এবং গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। গাজায় খাদ্য ও পানির সংকট তীব্র হয়েছে।
দাবি: ইসরায়েলি অভিযানের ফলে রাফাহতে বেসামরিক মৃত্যুর হার প্রায় নেই।
বাস্তবতা: রাফাহতে একাধিক ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে। মে মাসে একটি তাঁবু শিবিরে হামলায় ৪৬ জন নিহত হন। ফেব্রুয়ারিতে চারটি বিমান হামলায় অন্তত ৯৫ জন বেসামরিক নিহত হন, যার অর্ধেকই শিশু। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই হামলাকে ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছে।
দাবি: আমেরিকানদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হামাসের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়নি, তারা এখনও ইসরায়েলকে সমর্থন করে।
বাস্তবতা: নেতানিয়াহুর দাবি সঠিক নয়। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, অনেক আমেরিকান গাজায় চলমান ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি সমর্থন দিতে অনাগ্রহী। গ্যালাপের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জুন মাসে যুদ্ধের প্রতি অসন্তোষ ৪৮ শতাংশের, যা মার্চ থেকে সাত পয়েন্ট কম।
নেতানিয়াহুর দাবিগুলো বাস্তবতার সঙ্গে অনেকাংশেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাস্তবতা প্রমাণ করছে যে, গাজার পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড