মঙ্গোলিয়া যাযাবরদের টিকে থাকার লড়াই বাড়ছে

বিস্তীর্ণ মাঠে কিছু দূর পর পর বৃত্তাকার তাবু। এর মধ্যে কী নেই! রান্নার চুলা, টেলিভিশন, কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সবই রয়েছে। পূর্ব এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ মঙ্গোলিয়ার যাযাবররা এভাবেই তাবু বানিয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। তাদের ঐতিহ্যবাহী এই ঘরকে ‘গের’ বলা হয়। বর্তমানে জলবায়ু পরির্তনসহ নানা কারণে যাযাবরদের টিকে থাকার লড়াই বাড়ছে। খবর বিবিসির।
মঙ্গোলিয়ার কথা উঠলেই চলে আসে চেঙ্গিস খানের নাম। তিনি দেশটির জাতির পিতা। ১২০০ সালের শুরুতে সব মঙ্গল গোত্রের প্রধানকে একত্র করেন চেঙ্গিস। বাড়াতে থাকেন সাম্রাজ্য। চলতে থাকে একের পর এক অভিযান। এভাবে একপর্যায়ে চেঙ্গিস ও তার সন্তানসন্ততিরা অর্ধবিশ্বের অধিপতি হয়ে ওঠেন। তবে তাদের দাপট ধীরে ধীরে কমে যায়। ১৯১১ সালে কিং রাজবংশের পতনের পর স্বাধীনতা ঘোষণা করে মঙ্গোলিয়া। ১৯২১ সালে চীন প্রজাতন্ত্র থেকে দেশটি প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর খুব অল্প সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি উপরাষ্ট্রে পরিণত হয় মঙ্গোলিয়া। ১৯২৪ সালে মঙ্গোলিয়ান গণপ্রজাতন্ত্র একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
গত ২৪ বছরে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরের জনসংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে এক কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে। এত অগ্রগতির মাঝেও দেশটির ৪০ শতাংশ জনগণ এখনও আগের সেই ঐতিহ্যবাহী যাযাবর জীবনযাত্রায় জড়িত। তবে জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলেছে।
দেশটির গড় তাপমাত্রা ১৯৪০ সালের পর থেকে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এখন গ্রীষ্মকাল দীর্ঘতর এবং শীতকাল তীব্র হচ্ছে। তুষারপাতের পরিমাণ বাড়ছে, যা পশুদের জন্য খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করছে।
বিশ্বের পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর একটি মঙ্গোলিয়া। যার অর্থনীতি নির্ভর করে অনেকটা পশুসম্পদের ওপর। তৃতীয় শতাব্দী থেকে মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীরা পশুপালন করে এবং ভূমি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে যাযাবররা একত্রিত হয়ে নিজেদের এবং তাদের পশুদের রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করছে। সম্প্রতি দেশটির অনেক স্থানেই ঘাস কমে গেছে। কারণ বৃষ্টি নেই। সেই সঙ্গে পানির সংকট প্রবল হয়েছে। যাযাবররা ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে। জীবিকা রক্ষার জন্য শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘গেরহাব’ সংস্থার মাধ্যমে স্থানীয় হস্তশিল্প বিক্রি ও সম্প্রদায় ভ্রমণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন।
এক পশুপালক বলেন, এত তুষার আগে কখনও দেখা যায়নি। ফলে বর্তমানে আমাদের এদিকে অর্থের অভাব দেখা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত তুষারপাত এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত মঙ্গোলিয়ার চারণভূমি ও পশুপালকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা এখন দ্রুত বিলুপ্তির পথে। তাদের চারণভূমির সংকট এবং পশুপালন ব্যবস্থা বদলে যাওয়ার ফলে মঙ্গোলিয়ার যাযাবররা আজ এক কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন।
তবে নানান সংকটের মধ্যেও মঙ্গোলিয়া পর্যটকদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করছে। দেশটির ঐতিহ্য, ঘোড়দৌড়, কুস্তি, তীরন্দাজি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জাতীয় উদ্যানগুলোও পর্যটকদের জন্য এক নতুন আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।