সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে বিতর্ক

রিপোর্টার / ৪ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫

বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশে আসন্ন পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না। শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ও আবু সাঈদের প্রতিকৃতি ঘিরে তর্ক-বিতর্ক শেষ হতে না হতেই নতুন করে আলোচনায় এখন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিপরীতমুখী অবস্থান।

বিভাগের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ তুলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্দিষ্ট কিছু ‘ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর’ সম্পৃক্ততায় এবারের শোভাযাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করে ওই শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ অবস্থায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সঙ্গে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, শিক্ষকরা পাল্টা অভিযোগ করে বিবৃতিটিকে উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিহিত করছেন।

দু’পক্ষের এমন পাল্টা-পাল্টি অবস্থানে কিছুটা বিব্রত ও দ্বিধান্তিত এখন বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌভিক শান্তু বলেন, এর আগে কখনো আমরা এমন ঘটনা ঘটতে দেখিনি। দল-মত নির্বিশেষে বছররের পর বছর ধরে বর্তমান-সাবেক সব শিক্ষার্থী এতদিন একসঙ্গে এই আয়োজনে কাজ করে এসেছে।

শোভাযাত্রার বাকি আছে আর মাত্র দুই সপ্তাহ। ফলে সবার সহযোগিতা না পেলে অল্প এই সময়ের মধ্যে আয়োজনের সব কাজ পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হবে কি-না, সেটি নিয়েও এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ অবস্থায় বিবৃতি প্রদানকারীদের সঙ্গে আলোচনাও বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা চলার পরও বিষয়টির চূড়ান্ত কোনো সমাধান আসতে দেখা যায়নি।

বিতর্কের শুরু যেভাবে

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আগেও বিভিন্ন সময় বিতর্ক হতে দেখা গেছে। ধর্মভিত্তিক একাধিক গোষ্ঠী ও দলের সদস্যদের এই আয়োজনের বিরোধিতা করতেও দেখা গেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয় অর্ন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।

গত ২৩ মার্চের ওই বক্তব্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে ফারুকী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কী নামে এ শোভাযাত্রা হবে, সেটা আগামীকাল সভায় নির্ধারিত হবে। এটার নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, সেখান থেকে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। যে নাম একবার পরিবর্তিত হয়েছে, যদি সবাই সর্বসম্মত হয় তাহলে পরিবর্তিত হবে, সবাই সর্বসম্মত না হলে নাও হতে পারে।

তিনি আরও বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা শুধু বাঙালিদের না; এটা বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারো প্রত্যেকের। ফলে আমাদের দেখতে হবে আমরা এমন একটা নাম দিই, যেটা আমাদেরই হবে, ওরা যেন ব্র্যাকেটে না পড়ে যায়।

সংস্কৃতি উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়।

যদিও পরের দিন বৈঠক শেষে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শুরুর দিকে এই শোভাযাত্রার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্র’। পরবর্তীতে সেটার নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, যা এখনো প্রচলিত আছে।

নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়েই শোভাযাত্রার নামকরণ হয় তখন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করা হয়েছিল বলে জানান গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা এই শোভাযাত্রাটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেস্কো’ ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

একটা শেষ না হতেই আরেক বিতর্ক

নাম পরিবর্তনের আলোচনা-সমালোচনা শেষ হতে না হতেই ফের বিতর্ক শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায় শহিদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি রাখা নিয়ে।

আয়োজনদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, এ বছর শোভাযাত্রায় প্রাথমিকভাবে বড় আকারের চারটি প্রতিকৃতি ও ভাস্কর্য রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের ২০ ফুট দীর্ঘ একটি প্রতিকৃতিও থাকছে বলে জানান তারা।

আয়োজনদের এমন ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করতে থাকেন অনেকে। শহিদ আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়।

শহিদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন, আমরা চাই, আবু সাঈদ সবার মাঝে বেঁচে থাকুক, কিন্তু সেটা বিধি সম্মতভাবে। আমরা যেহেতু মুসলিম, সুতরাং আমাদের ইসলাম ধর্মে যেগুলো বিধিসম্মত না, আমরা সেগুলো চাই না।

বিষয়টি নিয়ে তারা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, শহিদ আবু সাঈদের বীরত্বকে তুলে ধরার জন্য প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ তার প্রতীকী মোটিফ রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। পরে যেহেতু আবু সাঈদের পরিবার সেটা চাচ্ছে না, সেজন্য সেখান থেকে সরে আসা হয়েছে।

আবু সাঈদের প্রতিকৃতি রাখার প্রস্তাবগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসেছিল বলে জানান চারুকলার ডিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা তাদের প্রস্তাবনা ও পরামর্শ চেয়েছিলাম। সেখানেই অনেকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

তবে শহিদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি রাখা না হলেও এবছর শোভাযাত্রায় কাঠের বাঘ, পাখি, ইলিশ মাছ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বড় প্রতিকৃতি রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

বিবৃতিতে যা বলছেন সদ্য সাবেক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়, প্রায় দুই দশক আগে থেকে সেটির তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন অনুষদটির মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা।

এ বছর আয়োজনের দায়িত্বে থাকার কথা ছিল অনুষদটির ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। যদিও তারা বছরখানেক আগেই মাস্টার্স পাস করে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অর্ণব বসাক বলেন, আসলে করোনা মহামারির সময় দু’বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ থাকায় এখানে একটা জট তৈরি হয়েছে। গতবছর যেহেতু পঁচিশ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে, সেই হিসেবে এবার আমাদের তত্ত্বাবধায়নে এটা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বুধবার ব্যাচটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে জানানো হয় যে, তারা মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সঙ্গে থাকছেন না। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেছেন যে, বৈশাখের এবারের আয়োজন রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যৌথভাবে প্রতিবছর মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজিত করা হয়ে থাকে। ওই আয়োজনে ব্যয় হওয়া অর্থও সংগ্রহ করা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে। কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনোরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে, যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্রপ্রতিনিধি কারও সঙ্গে কোনোরকম পূর্ব-আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।]

শিক্ষার্থীরা ওটাও বলেছেন যে, অন্যান্য বছর শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত কাঠামো বা প্রতিকৃতির নকশা ও ভাবনা কী হবে, সেটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন শিক্ষকরা। কিন্তু এবার সেটি করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শোভাযাত্রার জন্য বানানো স্ট্রাকচার এর ডিজাইন এবং আইডিয়া সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সাথে কোনোভাবেই সংযুক্ত এবং অবগত নন। শহিদ আবু সাঈদকে নিয়ে স্ট্রাকচার সম্পর্কেও আমরা অবগত ছিলেন না এবং কারও ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও না আমরা।

সবমিলিয়ে এবারের আয়োজনের কোনো দায়-দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা বহন করবে না বলে জানানো হয়েছে। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পক্ষে পাঠানো হলেও সেখানে কোনো নাম কিংবা স্বাক্ষর না থাকায় বিবৃতিটি আসল কি-না, সেটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের আয়োজন ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটি অস্বীকার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃপক্ষ। যে বিবৃতিতে অভিযোগ তোলা হয়েছে, উল্টো সেটিকেই উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন তারা।

অনুষদটির ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, এটা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক। যারা এই বিবৃতি দিয়েছে, তারা কেউই চারুকলার বর্তমান ছাত্র না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, আগের রীতি অনুযায়ী ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরই এবারের আয়োজনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল।

তিনি বলেন, ঘটনা হচ্ছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার অংশগ্রহণে আয়োজনটি করা হতো। সেখানে সাবেক শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতো। এরপর ২০০৬ সাল থেকে একটি ব্যাচকে এই আয়োজনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা এবার চারুকলার সকল রানিং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন আবারও সবাইকে মূল আয়োজনে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ এই পরিবর্তন কেন?

অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, আসলে তিন-চার বছর ধরেই আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এবছর থেকে আয়োজনে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম হিসেবে দেখাবার একটা ক্রেডিট আছে। যেহেতু সেখানে নম্বরের একটা বিষয় আছে, সেক্ষেত্রে এটাকে তো একটা অ্যালাইনমেন্টে আনতে হবে। সেখানে কোনো একটা ব্যাচ, যারা রানিং স্টুডেন্ট না, তাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে কীভাবে সমন্বয় করা হবে?

কিন্তু বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাবেকদেরও এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলছেন, এই সুযোগ আগেও ছিল, এখনও আছে। যারা বিবৃতি দিয়েছে, তাদের ব্যাচেরও তো অনেকে ইতোমধ্যে কাজ করছে। তাহলে তারা কাজে অংশ না নিয়ে বিবৃতি দিলো কেন? কোনো সমস্যা থাকলে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনাও তো করতে পারতো। সেটা না করে বিবৃতি দেওয়া কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর