বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

ভিলেন থেকে নায়ক জসীমের মৃত্যুর ২৬ বছর আজ

রিপোর্টার / ৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

ছিলেন খলনায়ক। তারপর ঘটনাচক্রে নায়ক হলেন। নায়ক হিসেবেই পরিচিতি, জনপ্রিয়তা। তাঁর একটি বড় পরিচয়, তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৮ সালে ৮ অক্টোবর হঠাৎ চলে যান চিত্রনায়ক জসীম। অল্পদিনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রিয় নায়ক হন তিনি। তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি একাধারে ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্য করে হাততালি কুড়িয়ে নিতেন আবার নায়ক হয়ে দর্শকদের আবেগে জড়াতেন, নীরবে অশ্রুবিয়োগের জন্য তাঁর অভিনয় দাগ কাটে ঢাকাই ছবির দর্শকের মনে।
আজ ৮ অক্টোবর চিত্রনায়ক জসীমের মৃত্যুর ২৬ বছর পূর্ণ হলো। বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে, তত দিন এই বাংলার মানুষ চিত্রনায়ক জসীমকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তাঁকে ভুলে যাওয়া কঠিন।
মানুষটি গত শতকের সত্তর দশকে বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা কিন্তু এই জসীমের হাত ধরেই। আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন জসীমের ছাত্র।
এখনো ইউটিউবে তাঁর অভিনয়, নাচ, মারপিটের দৃশ্যের ভিডিও চিত্র খোঁজেন দর্শক। তাঁকে নিয়ে ট্রল হয়, তাঁর অভিনয়কে অনুকরণ করেন তরুণেরা। এমনকি বিজ্ঞাপনেও তাঁর সাদৃশ্য মডেল দেখা যায়। বলা হয়, ফিরে এসেছেন জসীম।
১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জসীম। তাঁর আসল নাম আবদুল খায়ের জসীম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
খলনায়ক ও নায়ক দুই চরিত্রেই উজ্জ্বল নক্ষত্র জসীম। তাঁর আঙ্গিক, বাচিক অভিনয়ের ধার ছিল যথেষ্ট। যে বয়সে অন্য অভিনেতারা নায়ক চরিত্র করতে সাহস পেতেন না কিংবা পরিচালকেরা নিতেন না, সেই বয়সে জসীম নায়ক হিসেবে দাপিয়ে বেড়াতেন ঢালিউডে।
অনেকেই কৌতুক করে বলেন, ‘ভুঁড়িওয়ালা জসীম!’ মানুষটি গত শতকের সত্তর দশকে বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা কিন্তু এই জসীমের হাত ধরেই। আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন জসীমের ছাত্র।
খলনায়ক ও নায়ক দুই চরিত্রেই উজ্জ্বল নক্ষত্র জসীম। তাঁর আঙ্গিক, বাচিক অভিনয়ের ধার ছিল যথেষ্ট। যে বয়সে অন্য অভিনেতারা নায়ক চরিত্র করতে সাহস পেতেন না কিংবা পরিচালকেরা নিতেন না, সেই বয়সে জসীম নায়ক হিসেবে দাপিয়ে বেড়াতেন ঢালিউডে। তাঁর অভিনীত ছবিগুলো বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়।
জসীম অভিনয় শুরু করেন ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে জসীম প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও ছিল তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপের করা। এই ছবিতে জসীম চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও মূল পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে।
‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম ‘শোলে’ ছবির রিমেক। ছবিতে জসীম গব্বারের চরিত্র অভিনয় করেন। ওই সময় চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা করতেন—এমন একাধিক বিনোদন সাংবাদিক জানান, ‘শোলে’ ছবিতে গব্বার সিংয়ের আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসীমের। তিনি দর্শকের মাঝে এতটাই প্রভাব ফেলেছিলেন যে ‘আসামি হাজির’ ছবির ডাকু ধর্মার সঙ্গে ওয়াসিমের লড়াই দেখতে দর্শকেরা সিনেমা হলের প্রবেশপথ ভেঙে ভেতরে ঢুকেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে জানালেন প্রবীণ সিনেমা হল ব্যবসায়ী মিঞা আলাউদ্দিন। ‘লাইলী মজনু’ ছবির জসীম আরও ভয়ংকর, রাজ্জাক-ববিতার প্রেমের পথে কাঁটা।
‘জসীম ভিলেন অবস্থায় নায়ক ওয়াসিমের হাতে যে মাইরগুলো খেয়েছেন, নায়ক হয়ে সেই মাইরগুলা আবার জাম্বুকে ফেরত দিয়া দিছে। মানুষের ভাগ্য বদলাতে সময় লাগে না!’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন মন্তব্য প্রায়ই দেখা যায়। নেহাতই কৌতুক করে এমন মন্তব্য হলেও জসীমের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার সত্যিকার অর্থে দুই ভাগে বিভক্ত।
কয়েক বছর পর সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন জসীম। এটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি তিনি। বরং তিনি শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন পর্দায়। এই চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত নায়ক হিসেবেই অভিনয় করেছেন।
জসীম শাবানার সঙ্গে প্রেমিক ও ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকেরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
জসীমই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সঙ্গে প্রেমিক ও ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকেরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
আশির দশকের সব জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা ও রোজিনার সঙ্গে তাঁর জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাঁকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যায়।
জসীম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।
জসীমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।
দুই যুগ ধরে বাবার স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন জসীমের তিন ছেলে—এ কে রাহুল, এ কে রাতুল ও এ কে সামী। বাবার পথ ধরে অভিনয়ে নাম লেখাননি তাঁরা, কাজ করছেন সংগীতজগতে। তিনজনই যুক্ত ব্যান্ডের সঙ্গে। এর মধ্যে রাহুল ‘ট্রেনরেক’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ‘পরাহো’ ব্যান্ডের ড্রামার, রাতুল ও সামী যুক্ত আছেন ‘ওইনড’ ব্যান্ডের সঙ্গে। রাতুল ওইনডের ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট, সামী ড্রামার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর