ভারত-চীনের সীমান্ত টহল চুক্তি, সম্পর্ক স্বাভাবিকের পথে অগ্রগতি

ভারত ও চীন তাদের বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তে চার বছর ধরে চলমান সামরিক অচলাবস্থা সমাধানের লক্ষ্যে একটি টহল চুক্তিতে পৌঁছেছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এ তথ্য জানিয়েছেন। এই চুক্তিকে দুই দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন। ২২ -২৪ অক্টোবর রাশিয়ার কাজানে এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে মোদির সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হতে পারে বলে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কয়েক দফা কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তিতে পৌঁছেছে। পররাষ্ট্রসচিব মিশ্রি জানান, আলোচনা থেকে ভারত-চীন সীমান্ত অঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর টহল সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
মিশ্রি জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশের সেনাদের বিতর্কিত পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হতে পারে এবং ২০২০ সালে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেইজিং তাৎক্ষণিকভাবে মিশ্রির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২০২০ সালে বিতর্কিত সীমান্তে উভয় দেশের সেনাদের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় এবং চার জন চীনা সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
ব্রিকস সম্মেলনের সময় মোদি ও শির মধ্যে বৈঠক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মিশ্রি জানান, কাজানে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলো এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।
গত চার বছরে অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনায় ধীরগতি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ভারত চীনা বিনিয়োগের ওপর কড়া নজরদারি আরোপ করে এবং বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প স্থগিত করেছে।
এ মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, সীমান্তে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে চায় ভারত। তিনি সতর্ক করে দেন, এই লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি সংবেদনশীল থাকবে।
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, আলোচনায় সহজ ইস্যুগুলোতে সমাধান আসলেও আরও কঠিন বিষয়গুলো সমাধানে উভয় দেশকে অগ্রসর হতে হবে। তিনি বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলে তা সেনা কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্ত অচলাবস্থা নিরসনের দিকে অগ্রগতি হলে চীনা বিনিয়োগের ওপর ভারতের কড়াকড়ি শিথিল হতে পারে বলে পূর্বে জানানো হয়েছিল। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর থেকে চীনা বিনিয়োগের ওপর কঠোর নিয়ম জারি করায় বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আটকে গেছে। তবে সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারতের চীনা পণ্যের আমদানি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেইজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চীন এখনও ভারতের বৃহত্তম পণ্য সরবরাহকারী এবং গত বছর শিল্প পণ্যের প্রধান উৎস ছিল।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন নিয়ে গঠিত ব্রিকস। সম্প্রতি এতে দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও যোগ দিয়েছে।