মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

ভারতের নির্বাচন: সাবধানী প্রতিক্রিয়া ঢাকার রাজনীতিকদের

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ২০ বার
আপডেট : বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪

২০১৯ সালে ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয় পাওয়ার পর অভিনন্দন জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এবার ১৮তম লোকসভা নির্বাচনেও জয় পেয়েছে এনডিএ জোট। তবে এবার বিজয়ীদের প্রতি ঢাকার রাজনীতিকদের অবস্থান অনেকটা মিশ্র। রাজনীতিকদের কেউ কেউ আবার মন্তব্য করতেও সাবধানী। তারা বলছেন, ভারতের নির্বাচন দেশটির নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং জনগণের অধিকারের প্রশ্ন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, সবেমাত্র ভারতের নির্বাচন হয়েছে। এনডিএ জিতলেও নতুন সরকার গঠন হবে আরও কয়েক দিন পর। সেক্ষেত্রে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে পারে দেশের কয়েকটি দল। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দল অভিনন্দন জানালেও ব্যতিক্রম ছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো।
জোটগতভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবার ২৯৩ আসনে জয়ী হয়েছে। ২০১৯ সালে এনডিএ পেয়েছিল ৩৫৩ আসন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটটি ৩৩৬টি আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল। দলগতভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২৮২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। আর ২০১৯ সালে দলটি পেয়েছিল ৩০৩টি আসন। এবার ২৪০টি আসনে জিতেছে তারা। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দেশটির প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট এনডিএ ও ইন্ডিয়া জোট (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-এর প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনে এনডিএ’র বিজয় হলেও মূলত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাফল্য থেকে বিএনপির গ্রহণ করার মতো বাস্তবতা রয়েছে’ বলে দলটির প্রভাবশালী দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ মনে করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ, চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলের প্রার্থীদের বিজয় এবং তার সঙ্গে দেশটির সরকারের ‘চরম বৈরী’ আচরণের মধ্যেও নির্বাচনি সাফল্য এসেছে। একইসঙ্গে ভারতেও সদ্য নির্বাচনে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাফল্য থেকেও বিএনপির গ্রহণ করার মতো ‘বিচক্ষণতা’ প্রয়োজন।
পর্যবেক্ষণে দায়িত্বশীলরা উল্লেখ করেন, রাজনীতিতে বৈরিতার মধ্য দিয়েই সাফল্য আসে। এ বিষয়টি বিএনপির নেতৃত্ব ‘বিচক্ষণতার’ সঙ্গে বিবেচনা করতে সক্ষম হলে রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। যদিও স্বনামে বিএনপির কোনও নেতা এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি।
ভারতের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। বুধবার একটি অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, ভারতে ভোটের অধিকার আছে বলেই লোকসভা নির্বাচনে তার প্রতিফলন হয়েছে। ভারতবর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই তারা অন্তত এই যে মোদির (নরেন্দ্র মোদি) তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা-ভাবনা, সেটাকে তারা (জনগণ) রোধ করে দিয়েছে। আজকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না।
প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনের প্রভাব ঢাকার রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি তো মনে করি না। ভারতের নির্বাচন তারা তাদের মতো করবে। আমরা তো অন্য দেশের বিষয়ে মাথা ঘামাই না। তাদের নির্বাচনে কে আসবে, না আসবে, তা আমাদের বিবেচ্য না; সেটা ওই দেশের বিষয়। তারা ভোটে নির্বাচন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এটাই তাদের অধিকার। জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে বিএনপির বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক ও সংগঠনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, নির্বাচনে এনডিএ জোট ক্ষমতায় এলেও বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া ইতিবাচক অবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বিজেপির কট্টরপন্থা’ খানিকটা হলেও ব্যাকফুটে গেছে, বলে মনে করেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘ভারতে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আমি তাদের ওয়েলকাম করি। আমাদের দেশে তো ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতে যারা সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলেছিল, আশার কথা হচ্ছে তারা পাত্তা পায়নি। এটা ভারতের নিজেদের নিজস্ব ব্যাপার, তবু এটা জনগণের রায়। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম এই শীর্ষ নেতা মনে করেন, ভারতের নির্বাচন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শেখার আছে। আমরা আট কোটি ভোটার অথচ আমাদের এখানে সুষ্ঠু ভোট হয় না। নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে ভোট করি না। কিন্তু ভারতে ভোট হয়েছে, সেখানে তো প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার। এজন্য ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।
এবার মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে’ বলে মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘এটা স্বস্তির বিষয় যে আগের মতো একক আধিপত্য ভোগ করতে পারবে না বিজেপি। এর ফলে মোদির উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী নীতি কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাবে বলে আমার ধারণা।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৮ জুন নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি।
প্রসঙ্গত, ভারতের বিগত দুটি নির্বাচনের পর ঢাকার ইসলামপন্থি দলগুলোর রাজনীতিকরা ক্ষমতাসীন বিজেপি নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর