ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৮, জবাব দিয়েছে পাকিস্তান

পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে অন্তত আটজন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন।
ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে হামলার তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ অভিহিত করে এর সমুচিত জবাব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবরও মিলেছে।
বিবিসি, রয়টার্স ও আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এ হামলা চালায় ভারত।
গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মিরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। ভারতের হামলার ঘটনায় পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল।
হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষায় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের একজন সামরিক মুখপাত্র। অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেছে, ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকার ভিম্বার গলিতে কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাপুরুষ শত্রু ভারত এখন থেকে কিছু সময় আগে ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান্নাল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফ্ফরবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।’
হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে জানিয়ে আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। কোটলিতে দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আরও ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এরই মধ্যে এ হামলার বদলা নিতে শুরু করেছে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার মা-বাবা আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
‘অপারেশন সিন্দুর’ নাম দিয়ে চালানো এই হামলায় ‘সন্ত্রাসী স্থাপনা’কে নিশানা করাহয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত। যেসব স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেখান থেকে ভারতের ওপরে ‘সন্ত্রাসী’ হামলারপরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ভারতের সরকার দাবি করেছে।
তবে পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি বলে ভারত সরকার জানিয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ভারতীয় বাহিনীজইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে যে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে ভয়ঙ্করবিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করছে যে পাকিস্তান থেকেও ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলের ভিম্বর গলিতে গুলি চালানো হচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন শত্রুরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাঁচটি জায়গায় এক কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালিয়েছে। এ আগ্রাসনের ঘটনা ছেড়ে দেওয়া হবে না। বিনা প্ররোচনায় ভারতের এই হামলার চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে।
ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে হোয়াইট হাউজে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন করাহলে তিনি জবাব দেন, “এটা লজ্জার ঘটনা”।
হোয়াইট হাউজে এক বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, “আমি শুধু চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সংঘাত শেষ হোক।”
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা ওআন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “মহাসচিব দুই দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।ভারত-পাকিস্তানের আরও একটি সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।”