সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

ব্রিটেনে আজ ভোট, রেকর্ড জয়ের পথে লেবার পার্টি

মো. আশরাফ আলী / ৩ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪

ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই)। ব্রেক্সিটের পর তা বাস্তবায়নের কথা বলে বারবার দলের শীর্ষে নতুন মুখ এনে এবং আগাম নির্বাচন দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টি বিগত কয়েকটি নির্বাচনে পার হয়েছে নির্বাচনি বৈতরণী। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সব জনমত জরিপে এককভাবে সরকার গঠনের প্রশ্নে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। জনমত জরিপের পূর্বাভাস অনুসারে, এবার লেবার পার্টি দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারে।
বুধবার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবার পার্টির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বা বর্তমান নেতৃত্বে আস্থা রেখে মানুষ দলটিকে ভোট দেবেন, বিষয়টি এমন নয়। জনগণ টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। আর লিবডেম বা গ্রিন পার্টির মতো ছোট অনেক দলের নির্বাচনি ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতি তুলনামূলক জনবান্ধব ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পক্ষে। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা জানেন ছোট দলগুলোকে ভোট দিলে তা সরকার গঠন বা সরকার পরিবর্তনে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে না।
এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভের কফিনে যেন শেষ পেরেকটি মেরেছেন খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নিজেই। তরুণদের জন্য ক্ষমতায় গেলে ন্যাশনাল সার্ভিসের সেনা অথবা সিভিল সার্ভিস বাধ্যতামূলক করার ইস্যুতে শিশু-কিশোরদের অভিভাবকদের বিরাগভাজন হন ঋষি।
নির্বাচনি জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪৮৪টি আসনে লেবার পার্টি জয় পেতে পারে। এমনটি হলে ১৯৯৭ সালে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টির ৪১৮টির চেয়ে বেশি আসনে এবার জিতবে দলটি। ওই সময় ব্রিটিশ ইতিহাসে সর্বোচ্চ আসনে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল লেবার পার্টি।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ৬৪টি আসনে জয় পাবে বলে পূর্বাভাসে উঠে এসেছে। যদি এই পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে ১৮৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কনজারভেটিভ পার্টির ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে কম আসনে জয়ের রেকর্ড।
অপর জনমত জরিপগুলোতে লেবার পার্টি এর চেয়ে কম ব্যবধানে জিততে পারে বলে উঠে এসেছে। তবে কোনও জরিপেই কনজারভেটিভ পার্টির জয় সম্পর্কে কোনও আশাবাদী পূর্বাভাস নেই।
ক্রয়ডন এলাকার বাসিন্দা এনএইচএসে কর্মরত একজন নারী এ প্রতিবেদককে বলেছেন, তিনি তার একমাত্র সন্তানকে ট্রেনিংয়ে পাঠাতে চান না। ৩৭ বছরের জীবনে এবারই তিনি প্রথমবার কনজারভেটিভকে ভোট দেবেন না।
ডাকসুর সাবেক সিনেট সদস্য, লন্ডন স্কুল অব কমার্স অ্যান্ড আইটির সিইও নসরুল্লাহ খান বলেছেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু বড় দুটো দলের নীতি প্রায় এক। মানুষ এবার সুযোগ দিতে চায় লেবার পার্টিকে। দোদুল্যমান ভোটারদের ভোটও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকে লেবারের বাক্সে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। লেবার নেতা হিসেবে কিয়ার স্টারমার সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তার কথাবার্তা মানুষকে টানতে পেরেছে। এখন দেখার বিষয় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে লেবার কতটা ভালো করতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, সাবেক লেবার লিডার জেরেমি করবিন মানুষ হিসেবে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে তিনি মানুষের মধ্যে সেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। তা যদি পারতেন তাহলে অনেক আগেই লেবার পার্টি ক্ষমতায় যেত। সেই জায়গা স্টারমার তৈরি করতে পেরেছেন। এই কারণে এবার কনজারভেটিভ ইতিহাসে সবচেয়ে কম আসন নিয়ে পার্লামেন্টে যেতে পারে। লেবারের এই ভূমিধস নামানো বিজয়ের সময়েও সাবেক লেবার লিডার জেরেমি করবিনের মতো কিছু তুমুল জনপ্রিয় নেতা নিজেদের দলের সমর্থন ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে পার্লামেন্টে যাবেন।
জেএমজি কার্গোর কর্ণধার ও ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মনির আহমেদ বলেছেন, ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা খাতসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবার মান কমে যাওয়া, আবাসন ও অর্থনৈতিক সংকটে কনজারভেটিভের বিকল্প হিসেবে মানুষ লেবার পার্টিকে বেছে নিতে যাচ্ছে। এ সরকারের আমলে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর