বৃষ্টিতে ডুবেছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, ভোগান্তিতে নগরবাসী

রাজধানী ঢাকায় আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর চারটা থেকে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। এতে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ সড়ক ডুবে গেছে। এছাড়া অলিগলিতে কোথাও হাঁটু কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে। টানা ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন কম থাকায় ভিজে ভিজেই গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ছাতা ব্যবহার করলেও তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। এছাড়া, সড়কে জমে থাকা হাঁটু পানিতে ভোগান্তি বেড়েছে। পরবর্তী ছয় ঘণ্টাতেও বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, ঢাকার আকাশ মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। আজ দুপুর ১২টায় ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। ঢাকায় গতকালের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর নটরডেম কলেজের সামনে, আরামবাগ, মতিঝিল, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মগবাজার, তেজগাঁও, খিলগাঁও, বাসাবো, কাকরাইল, পল্টন, পুরান ঢাকা, বংশাল, সূত্রাপুর, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুরসহ বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তায় হাঁটুপানি জমায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ভোগান্তিতে পড়া রাজধানীর বাসিন্দারা জানান, আজ ছুটির দিন হওয়ায় গণপরিবহন কম। তার ওপর বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় গণপরিবহন তেমন একটা নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোও পানির কারণে ধীরগতিতে চলছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রিকশাও আজ কম। রিকশাচালকরা পঞ্চাশ টাকার ভাড়া দেড়শ’-দুইশ’ টাকা দাবি করছেন। সিএনজি বা অটোরিকশা চালকদের আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার সড়কগুলোতে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন অলিগলি। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি। নিচে নেমে দেখি বাসার তিন সিঁড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পানিতে গলি ডুবে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সব ভেসে উঠেছে, অনেক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
মিরপুরের বাসিন্দা আবু বকর বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীর অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়ক ডুবে যায়। ১৫-২০ বছর আগে যেমন ছিল এখনও একই সমস্যা আছে। কোনও উন্নতি নেই। একের পর এক মেয়র আসছেন-যাচ্ছেন কিন্তু জলাবদ্ধতা সমস্যা কেউ নিরসন করতে পারছেন না। মেয়ররা সবসময় বলেন জলাবদ্ধতা আর হবে না। কিন্তু দেখা যায় অল্প সময়ের বৃষ্টিতে ঠিকই জলাবদ্ধতা হয়। আবার এই ব্যর্থতার দায়ভারও কেউ নিচ্ছে না।
মতিঝিল এলাকায় গাড়ি পার্ক করে রাখা সুরুজ মিয়া জানান, সকাল থেকে এত বৃষ্টি হয়েছে যে আমার গাড়িটি প্রায় ডুবেই গেছে। দুই-তিন ঘণ্টা ধরেও পানি সরছিল না। শুধু আমারটি না, যে কয়টি গাড়ি পার্ক করা ছিল সবগুলো ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। গাড়ি রেখে যে অন্য কোনও মাধ্যমে বাসায় যাবো সেই উপায় নেই। বৃষ্টির কারণে সবকিছু থমকে ছিল। আশপাশে রিকশা বা বাস কিছুই চলছিল না।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, শুধু ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে তারা ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির জানান, সকাল ৬টা থেকে ৯ পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সারা দিনই থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভারী বৃষ্টির পানি সরাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন। তিনি বলেন, শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়াও ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম (QRT)। প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে ১০ জন কর্মী রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনে কল্যাণপুরে ডিএনসিসির পাঁচটি পাম সকাল থেকে একযোগে কাজ করছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীর ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাসের। তিনি বলেন, যেখানে জলজট সৃষ্টি হয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তা নিরসনে সকাল থেকেই কাজ করছেন। অনেক এলাকায় ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। কাজ এখনও চলমান আছে। আশা করছি দ্রুত জলজট নিরসন হবে।