সেই ১৩ বছর বয়স থেকে শুরু, এখন বয়স ৩৪। মাঝে কেটে গেছে দুই দশকেরও বেশি সময়। বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক অবশেষে ছিন্ন করতেই হলো লিওনেল মেসিকে। জানালেন, প্রাণের আঙিনায় থেকে যেতে সব চেষ্টাই করেছিলেন তিনি।
নানা গুঞ্জনের পর গত বৃহস্পতিবার বার্সেলোনা নিশ্চিত করে, তাদের সঙ্গে শেষ হচ্ছে মেসির সম্পর্ক। কাম্প নউয়ে থাকছেন না ফুটবলের এই মহাতারকা।
শেষ পর্যন্ত লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়মে আটকে যায় মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তি। সংবাদ সম্মেলনে রোববার এই আর্জেন্টাইন তারকা জানান, তার দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।
“এখানে থাকতে সম্ভাব্য সব কিছুই করেছিলাম আমি, পারিনি। আমার আর কিছু বলার নেই। করা সম্ভব, এমন সবকিছুই করেছি আমরা। সভাপতি ব্যাখ্যা করেছেন সব। ক্লাব বিশাল পরিমাণ ঋণের মধ্যে আছে এবং আরও ঋণ বাড়াতে চায় না। যদি এটা প্রায় অসম্ভবই হয়, তাহলে এত টানাটানি কি দরকার। আমার ভবিষ্যৎ ও ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে হবে।”
চুক্তির একটি ধারা কার্যকর করে গত বছর ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ওই ধারা কার্যকরের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় অনেক টানাপোড়েনের পর অনিচ্ছায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে গত ১ জুলাই ফ্রি এজেন্ট হয়ে যান মেসি। তবে এবার নতুন চুক্তিতে পুরনো ঠিকানায় ফিরতে রাজি ছিলেন রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। ক্লাবের কথা চিন্তা করে বেতনের ৫০ শতাংশের কমে চুক্তিও করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরও তাকে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা।
গণমাধ্যমের খবর, বেতন ৭০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মেসিকে। অথচ সময়ের সেরা এই ফুটবলার জানান, এসব নিয়ে তার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি।
“৫০ শতাংশ কমিয়েছিলাম আমার বেতন। এরপর ক্লাব আমার কাছে আর কিছু চায়নি। (কিছু গণমাধ্যম) যেটা বলছে, আমাকে আরও ২০ শতাংশ বেতন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। একদমই সত্যি নয়।”
২০০৪ সালে বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক হয় মেসির। এরপর থেকে ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন দলের মধ্যমণি, সাফল্যের নায়ক। সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
ক্লাবটির সঙ্গে ২১ বছরের পথচলায় চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ১০টি লা লিগাসহ জিতেছেন রেকর্ড ৩৫টি শিরোপা। ক্লাবের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তো বটেই, স্পেনের শীর্ষ লিগেরও রেকর্ড গোলদাতা তিনি। প্রিয় জার্সিতে এমন আরও অনেক রেকর্ড ও অসামান্য সব কীর্তি গড়েছেন মেসি।
থাকতে চেয়েছিলেন আরও অনেক দিন। পুরনো ঠিকানা প্রিয় বন্ধু-সতীর্থদের সঙ্গে মিলে উপভোগ করতে চেয়েছিলেন আরও জয়, চেয়েছিলেন আরও অনেক শিরোপা উৎসব করতে। কিন্তু হলো না নিয়মের বেড়াজালে পড়ে। এত দিনের সম্পর্ক ভেঙে চলে যাওয়ার মুহূর্তটি তাই মেসির জন্য অনেক বেশিই বিষাদের।
“সময়টা খুব কঠিন। অনেক বছর, অনেক কিছুর সাক্ষী ছিলাম। সম্ভবত আমার যখন অভিষেক হয়, ওই মুহূর্তটাই ছিল সব কিছু। আমার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্ত ছিল সেটি। এরপর যা কিছু পেয়েছি সবই অসাধারণ।”