সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু তার মেয়েদের দেখে রাখতে বলেছিলেন

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৭২ বার
আপডেট : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

১৩ আগস্ট মা-বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম থেকে শেষ কথা হয়। এ সময় নেদারল্যান্ডস কীভাবে নদী থেকে জমি উদ্ধার করছে এ বিষয়ে তাদের কথা হয়। ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে ফ্রাঙ্কফুর্টে যাত্রাবিরতি নেন, তখন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও তারিক এ করীমকে বলেন, মেয়েরা জার্মানি এলে দেখে রেখো’।

২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন আগে জার্মানি যাই। ড. ওয়াজেদ সেখানে ছাত্র ছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন না আমি যাই। এক পর্যায়ে বাবা নিজেই বলেছিলেন, আচ্ছা যাও। অনেকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দেশ ছাড়ি। যাওয়ার সময় মা আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। আমি জানি না, যাওয়ার দিন কেন আমার মা এভাবে কেঁদেছিলেন। মাকে আমি কখনও এভাবে কাঁদতে দেখিনি। তিনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন। কখনও তার অভাব অভিযোগের কথা বলতেন না। যাওয়ার সময় তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বললাম, মা তুমি এভাবে কাঁদলে আমি যাবো না। আমি জানি না তিনি কিছু বুঝতে পেরেছিলেন কিনা।

সেখানে পৌঁছে দুই বোন বেশ আনন্দেই ছিলেন। ১৪ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে তারা আমস্টারডাম শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও আমস্টেল নদীর রাস্তা ধরে ঘুরতেও বের হন। গাড়িচালক তনু মিয়া আগে থেকেই খানিকটা চিনতেন। তিনি শেখ হাসিনা, ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ রেহানাকে শহরের কেন্দ্র ঘুরিয়ে দেখান। একপর্যায়ে তিনি রেহানাকে বলেন, আপনি আমার বোনের মতো দেখতে। রেহানা উত্তরে বলেন, ভালোই তো। আমি তো আপনার বোনের মতোই। তারা সেসময় ঘুরে ঘুরে প্রিয় মানুষদের পছন্দের নানা কিছু কেনাকাটা করেন। সেসময় অনেকে পাইপের সাহায্যে ধূমপান করতেন। বঙ্গবন্ধুর পছন্দ ছিল সুগন্ধিযুক্ত এরিন মোর। জামাতা ওয়াজেদ মিয়া সেটা জানতেন। তিনি খুঁজে খুঁজে ভালো তামাক কেনেন।

১৪ আগস্ট তারা ব্রাসেলসে রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসাতেই রাত কাটান। কথা ছিল পরদিন ১৫ আগস্ট সকালে উঠে প্যারিসে যাবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। সেবছর ১৭ জুলাই জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন, ওই মাসের শেষে রেহানা ও দুই ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হাসিনা জার্মানি যাবেন।

ওয়াজেদ মিয়া বলেন, কয়েক মাস পর আমি দেশে ফিরতে পারি। হাসিনার অত টাকা-পয়সা খরচ করে জার্মানি আসা ঠিক হবে না। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, তোমার ছেলে জয়কে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। ও সারাক্ষণ তোমার কথা বলে, তোমার খোঁজ করে, তোমার কাছে যেতে চায়। কথাগুলো বলে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন শেখ হাসিনাকে দেন। এর আগেই বঙ্গবন্ধু তার মেয়ের জার্মানি যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জ্যামাইকাতে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে ফ্রাঙ্কফুর্টে সাত ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন।

বঙ্গবন্ধু যাত্রাবিরতি শেষে একটি উড়োজাহাজে জ্যামাইকা রওনা হন। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী তাকে বিদায় জানান। এ সময় দূতাবাসের সহকারী প্রথম সচিব সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডান পাশে ছিলেন রাষ্ট্রদূত আর বাঁ পাশে ছিলেন তারিক এ করিম। তাদের একটু সামনে ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন।

বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান। রাষ্ট্রদূত চৌধুরী তখন তারিক এ করিমকে দেখিয়ে বলেন, স্যার আমি কিছুই করিনি। সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার কথা ওর। বঙ্গবন্ধু এ সময় তারিক এ করিমকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেন, শিগগিরই আমার দুই কন্যা জার্মানিতে আসবে। তোমরা ওদের একটু দেখে রেখো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর