শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

বকেয়া পেতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আদানির ‘মান্থলি রিসিভেবল’ ফর্মুলা

রিপোর্টার / ২৫ বার
আপডেট : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার ১২ শতাংশ (বা তার সামান্য কমবেশি) ভারত থেকে সরবরাহ করা হয় বলে এ সেক্টরের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন। ভারতের যে সংস্থাটির বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, সেই আদানি পাওয়ার ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবরে চিঠি লিখে তাদের পাওনা ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার মিটিয়ে দেওয়ার জন্য তার ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছে।
এখন ভারতের যে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর মিলিতভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের ওপর পাওনা, তার মধ্যে আদানি পাওয়ার ছাড়াও আরও অন্তত সাতটি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আদানি পাওয়ারের পাওনা অর্থের পরিমাণই অবশ্য সবচেয়ে বেশি, ৮০ কোটি ডলার। তবে এ হিসাব ৩০ জুনের পর আরও আড়াই মাসের পাওনা অর্থ যোগ হবে। পাওনাদারদের তালিকায় বাকি সংস্থাগুলো হলো— সেইল এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেড (পুরনো নাম সেম্বকর্প এনার্জি)– ১৫ কোটি ডলার, পিটিসি ইন্ডিয়া– ৮ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার, এনটিপিসি (দামোদর ভ্যালি করপোরেশন)– ৬ দশমিক ৪৬ কোটি ডলার, এনটিপিসি (ত্রিপুরা)– ২ দশমিক ১৯ কোটি ডলার, এনটিপিসি– ১ দশমিক ৬৫ কোটি ডলার এবং পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন– ২ কোটি ডলার।
এরইমধ্যে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে গত ২৭ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, তারা যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে, সে জন্য এই ৮০ কোটি ডলার পরিশোধ করাটা জরুরি– কারণ ঋণদাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রতি এখন ‘কঠোর মনোভাব’ দেখাচ্ছে। ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি বিবিসির হাতেও এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে পাওনা অর্থ পরিশোধের জন্য আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি ‘ফর্মুলা’ও সুপারিশ করা হয়েছে। মোটামুটিভাবে এ ‘ফর্মুলা’টা হলো— বিদ্যুৎ সরবরাহের অ্যারেঞ্জমেন্টটা টেকসই (‘সাসটেইনেবল’) রাখার জন্য বকেয়ার পরিমাণ কিছুতেই ৫০ কোটি ডলার ছাড়ানো চলবে না। ফলে বকেয়ার পরিমাণ এই সীমায় নামিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশকে অবিলম্বে অন্তত ৩০ কোটি ডলার একবারে শোধ করতে হবে। এ ছাড়া ১৬০০ মেগাওয়াট (পূর্ণ ক্ষমতা) বিদ্যুৎ আমদানির সাপেক্ষে বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) প্রতি মাসে আদানিকে ৯ থেকে ৯ দশমিক ৫ সাড়ে কোটি ডলার মেটানোর কথা (‘মান্থলি রিসিভেবল’)– কিন্তু গত বেশ কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে বড়জোর ৪ থেকে ৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার মেটানো হয়েছে বলেই বকেয়ার পরিমাণ এভাবে আকাশ ছুঁয়েছে। কাজেই আদানি পাওয়ার সুপারিশ করেছে, পিডিবি প্রতি মাসে ‘মান্থলি রিসিভেবল’-এর এই পুরো পরিমাণটা মেটাতে থাকুক– তাতে বকেয়ার পরিমাণও বাড়বে না এবং পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহও অব্যাহত থাকবে।
আদানি শিল্পগোষ্ঠীর একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোভিড মহামারির মধ্যেও মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ২০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে’ গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আলাদা ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে– কিন্তু এখন বিদ্যুৎ বেচার টাকা ঠিকমতো না-পেলে তাদের জন্য ঋণের কিস্তি শোধ করাই মুশকিল হয়ে উঠছে! আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি ‘তাগাদা’ দেওয়ার রাস্তায় হাঁটলেও এনটিপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো অবশ্য এখনো সে ধরনের চরম পদক্ষেপ নেয়নি। তবে এই সংস্থাগুলোর প্রায় সবাই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করেছে। যেমন ত্রিপুরা থেকে প্রতি দিন বাংলাদেশে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা থাকলেও প্রায় চার-পাঁচ মাস হয়ে গেল কখনই দৈনিক ৯০ থেকে ১১০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে না। আর এর মূলেও আছে ঠিক সময়ে অর্থ পরিশোধ না করা।
ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি করপোরেশন লিমিটেডের এমডি দেবাশিস সরকার বলেছেন, ঠিক সময়ে টাকাপয়সা না-পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া মুশকিল এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। করপোরেশনের ‘ক্যাশ ফ্লো’ (নগদ অর্থের প্রবাহ) কমে গেছে বলেই আমরা বিদ্যুতের জোগানে রাশ টানতে বাধ্য হয়েছি। তবে এ বিষয়টি ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে’র পর্যায়ে পড়ে এবং যেহেতু এর সঙ্গে একটি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সম্পর্ক জড়িত, তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।
ত্রিপুরার কর্মকর্তারা বিবিসিকে আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুতের পেমেন্ট নেওয়ার বিষয়টির তদারকি করে এনটিপিসির বাণিজ্যিক শাখা এনভিভিএন। ফলে তারা নিজেরা বাংলাদেশকে কোনো তাগাদা দেন না, তাদের হয়ে এই কাজটা এনভিভিএনেরই করার কথা।
দিল্লিতে এনটিপিসির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আবার বলছেন, একটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে আদানি পাওয়ার যেভাবে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি লিখে তাগাদা দিতে পারে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হিসেবে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবে ঢাকার সঙ্গে নির্ধারিত কূটনৈতিক চ্যানেলের আলোচনায় দিল্লির পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গটি অবশ্যই উত্থাপন করা হচ্ছে বলে তারা নিশ্চিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর