শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সোম-মঙ্গলবার ঢাকায়, অন্যান্য দিন সারা দেশে পরিদর্শন করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিশার রহস্যময় প্রেম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন না বাইডেন ব্রিটেনে আজ ভোট, রেকর্ড জয়ের পথে লেবার পার্টি জলবায়ু পরিবর্তন: চীনে অত্যধিক গরম ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহের সতর্কতা যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু ১২ বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে সেই বাংলাদেশি বিস্ময় বালক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পক্ষে ভোট, ক্ষমতাসীন দল থেকে পদত্যাগ অস্ট্রেলীয় সিনেটর ফাতিমার ছবিতে ভোটকেন্দ্রে হাসি মুখে লেবার পার্টির নেতারা ১১ মার্কিন কর্মকর্তার ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা

ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থিদের উত্থান, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় মুসলিমরা

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

ফ্রান্সে মারিন লে পেনের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র‍্যালির (আরএন)-এর পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পর মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্যারিসের ২২ বছর বয়সী মুসলিম তরুণী ফাতিমাতা মনে করছেন, অনেক ফরাসি তার অস্তিত্বের বিরোধিতা করছেন।
রবিবার প্রথম দফার পার্লামেন্টারি নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিরা এগিয়ে রয়েছে। অবশ্য আগামী ৭ জুলাইয়ের দ্বিতীয় দফার ভোটে আরএন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফাতিমাতার মতো ফ্রান্সের প্রায় ৬০ লাখ মুসলমানও একই আশঙ্কায় রয়েছেন।
ফাতিমাতা আল জাজিরাকে বলেছেন, আমি ফ্রান্সের দ্বারা প্রতারিত বোধ করছি। ১ কোটির বেশি মানুষ এমন একটি দলের জন্য ভোট দিয়েছে যারা জনসমক্ষে পর্দা নিষিদ্ধ করার প্রচারণা চালাচ্ছে, এটি জানতে পারা বেদনাদায়ক।
ফাতিমাতা হিজাব পরে করেন এবং মৌরিতানীয় ও সেনেগালীয় অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। লে পেনের দল ফ্রান্সের অভিবাসী সম্প্রদায়কে প্রায় সময় আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে আসছে। তিনি প্যারিসের উপকণ্ঠের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে বড় হয়েছেন। অঞ্চলটিতে অভিবাসী ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস।
লে পেন জনসমক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লে পেনের উত্তরসূরি জর্ডান বারডেলা এগিয়ে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, পর্দা একটি বৈষম্যের হাতিয়ার। প্যারিসের উত্তরাঞ্চলের জনবহুল ব্যানলিউকের ‘ইসলামিকরণ’-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এবং তার দল ক্ষমতা পেলে দ্বৈত নাগরিকদের কিছু ‘কৌশলগত’ রাষ্ট্রীয় কাজে নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বারডেলা বলেন, আমি নিজের দেশেই বিদেশি হয়ে ওঠার অনুভূতি পেয়েছি। আমি আমার প্রতিবেশে ইসলামিকরণ অনুভব করেছি।
সাইন-সেন্ট-ডেনিস থেকে আসা ফাতিমাতা বলেন, আমি ১৩ বছর বয়সে ফরাসি নাগরিকত্ব পেয়েছিলাম। আমি ভাবতে পারি না যে, আমার মতো ১৩ বছরের একটি মেয়ে হয়ত অনেক কিছু অর্জন করতে পারবে না আরএনের জয়ী হওয়ার কারণে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ বুমেরাং হয়ে গেছে। রবিবার আরএন ভোটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্জন করেছে। বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।
২৭ বছর বয়সী এক মার্কেটিং কর্মী ইলিয়াস বলেন, অনেক মুসলিম ভাবছে যদি আরএন শাসন করতে শুরু করে তবে তাদের ফ্রান্স ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। অনেক পেশাজীবী ইতোমধ্যে এমন বিবেচনা শুরু করেছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইসলামবিদ্বেষের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ফরাসি মুসলমানরা বিদেশে চাকরির সন্ধানে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন।
ইলিয়াস বলেন, যদি আমরা সবাই চলে যাই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রতিরোধ করবে কে? আমি মনে করি থাকাটা জরুরি, অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমি আমার ছোট ভাইয়ের জন্য ভীত। তার বয়স ১৫ বছর এবং ১৩ বছর বয়সেই তার প্রথম পুলিশ চেক হয়েছে।
১৮ বছর বয়সী আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ছাত্রী তিজিরি মেসাউদেন বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্বের ওপর বারডেলার অবস্থান তাকে সবচেয়ে বেশি ভীত করে তুলেছে। ন্যাশনাল র‍্যালি বলছে যে দ্বৈত নাগরিকত্বধারীদের কিছু ‘কৌশলগত অবস্থানে’ কাজ করতে দেওয়া হবে না। এটি আমার ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলছে।
মেসাউদেন বলেন, ম্যাক্রোঁর অধীনে আমরা একটি নাজুক ইসলামবিদ্বেষীয় এবং বর্ণবাদী পরিবেশে বসবাস করেছি। মুসলমানরা এবং বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষরা লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। ফরাসি আইনি বিশেষজ্ঞ রিম-সারাহ আলোয়ান বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ন্যাশনাল র‍্যালির কিছু লক্ষ্য অর্জন করা ‘তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব’ হবে।
সংবাদমাধ্যমে কট্টর ডানপন্থি বক্তব্য নিয়ে গবেষণা করা বেনিয়মিন টেইন্টুরিয়ার বলেছেন, যদি শাসক গোষ্ঠী এমন ধারণা প্রচার করে যে মানুষদের তাদের উৎপত্তি অনুযায়ী বৈষম্য করা গ্রহণযোগ্য, তবে এটি পুলিশি সহিংসতাকে বৈধতা দিতে পারে ও তা বাড়াতে পারে।
এদিকে কট্টর ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দেশ শাসনের ঝুঁকিতে থাকা ম্যাক্রোঁ ভোটারদের নিজেদের পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কট্টর ডান বা বামপন্থার বিজয়ের ক্ষেত্রে ‘গৃহযুদ্ধ’-এর আশঙ্কা সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন।
সূত্র: আল জাজিরা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর