প্রশ্নপত্র ফাঁস: সংশ্লিষ্টতা পেলে মানি লন্ডারিং মামলা

তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টতা পেলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় আটক আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আবেদ আলীসহ সাত আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর বাংলা ট্রিবিউনকে এই কথা জানান তিনি।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, গ্রেফতারকৃত সবার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এবং তাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও কিছু আসামি পলাতক রয়েছে। আমরা তাদেরকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এর পরের পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে পিএসসির ক্যাডার ও ননক্যাডার পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নফাঁসের অভিযোগকে কেন্দ্র করে যে অবৈধ সম্পত্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টতা যদি পাওয়া যায়, তাহলে মানি লন্ডারিংয়ে মামলা করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত ১০ জনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, পিএসসি’র উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান।
বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে গত ৭ জুলাই রাতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর অভিযানে নামে সিআইডি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকমিশন আইনে রাজধানীর পল্টন থানায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপ-পুলিশ পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র দাস মামলা করেন।
এদিকে সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। কীভাবে আসামিরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করতো, তারা কীভাবে টাকা সংগ্রহ করতো, মামলার বিচার শুরুর আগে তা প্রকাশ পেলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এখনই সে বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৬ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, গত ৫ জুলাই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন ক্যাডার) এর নিয়োগ পরীক্ষার জন্য একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে ওই পরীক্ষার হুবহু প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। তারা অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে ওই পদের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করেছে। এ নিয়ে গত ৭ জুলাই অভিযান চালানোর জন্য সোর্সের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি লিটন সরকারকে ঢাকার শ্যামলী এলাকা হতে আটক করা হয়। এরপর একজন থেকে আরেকজনের কাছে পৌঁছে এই চক্রের ১৭ জনকে আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন ক্যাডার) পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বিতরণ কাজে পলাতক অভিযুক্ত নিখিল চন্দ্র রায়, মো. শরীফুল ইসলাম ভুইয়া, দীপক বনিক, মো. খোরশেদ কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, মো. গোলাম আজিদু মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০/৬০ জন ব্যক্তি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে বিগত বছরগুলোর বিসিএসসহ পিএসসির বিভিন্ন গ্রেডের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছিলেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামিরা।