পিএসজি থেকে বিদায় সুখকর হলো না মেসির

ক্যারিয়ারে এমন কিছু নেই যা জয় করেননি লিওনেল মেসি। আরাধ্য বিশ্বকাপও জিতেছেন ২০২২ সালে। কিন্তু নানা কারণে প্যারিস অধ্যায়টা তার সুখকর হয়নি। মাঠের লড়াইয়েও এখানে খুব বেশি আলো ছড়াতে পারেননি। ২০২১ সালে প্রাণের ক্লাব বার্সিলোনা ছেড়ে পিএসজিতে আসার পর নানা কারণে ছিলেন আলোচনায়। সবশেষ ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা কাতার বিশ্বকাপ জয় করার পর থেকেই ফরাসি সমর্থকদের মন থেকে উঠে যান এলএমটেন!
যার প্রভাব পড়ে বিশ্বকাপ পরবর্তী পিএসজির ম্যাচগুলোতে। এরপর প্রতি ম্যাচেই মেসিকে উদ্দেশ করে গ্যালারি থেকে গালিগালাজ দিতে থাকেন পিএসজির সমর্থকরা। এই সময়ে ক্লাবের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটে মেসির। এই অবস্থার মধ্যে পিএসজির হয়ে শেষ ম্যাচও খেলে ফেলেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। শনিবার রাতে ফরাসি লিগ ওয়ানের ম্যাচে সফরকারী ক্লেরমন্টের কাছে ৩-২ গোলে হেরেছে স্বাগতিক পিএসজি। আগেই শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে হার দিয়ে মৌসুম শেষ করেছে। এটিই ছিল প্যারিসের পরাশক্তিদের হয়ে মেসির শেষ ম্যাচ। শুধু তাই নয়, স্পেনের তারকা ডিফেন্ডার সার্জিও রামোসেরও এটিই পিএসজির জার্সিতে শেষ ম্যাচ। ম্যাচ শুরুর আগে লাউড স্পিকারে একাদশ ঘোষণার সময় স্টেডিয়ামে মেসির নাম উচ্চারিত হতেই ভেসে আসে দুয়ো। খেলার সময় মেসি একটি সুযোগ হাতছাড়া করতেই আবার দুয়ো। ম্যাচ চলার সময় বার কয়েক একই ঘটনা ঘটেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকাকে এভাবেই বিদায় জানিয়েছেন পিএসজির সমর্থকদের একটি অংশ।
পিএসজিতে নিজের বিদায়ী ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছেন রামোস। ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কিলিয়ান এমবাপে। কিন্তু ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচেও জিততে পারেনি পিএসজি। পরে তিন গোল হজম করে হেরেছে স্বাগতিকরা। ডিফেন্ডার হয়ে ম্যাচে গোল করে রামোস বিদায় রাঙালেও মেসি ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। দুয়ো শুনলেও মেসি সব কিছু সহ্য করে মুখে হাসি রেখেছিলেন। শেষ ম্যাচে তার সঙ্গে ছিল তিন সন্তান। দলীয় ছবি তোলার আগে সন্তানদের হাতে ধরে রেখেছিলেন মেসি। পরে চুমু এঁকে দেন তাদের কপালে। আদরের তিন সন্তানকে পরম মমতায় আগলে রেখে শেষবারের জন্য মাঠে পা মাড়ান মেসি। থিয়াগো, মাত্তেও ও চিরো ছিলেন স্মরণীয় সেই সময়ের দর্শক। শেষ ম্যাচের আগে বিদায়ী বিবৃতিতে আর্জেন্টাইন মহাতারকা বলেন, এই দুটি বছরের জন্য এই ক্লাব, প্যারিস শহর ও এই শহরের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। সবাইকে জানাই ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা। প্যারিসের ক্লাবটিতে দুই বছরে দুটি লিগ শিরোপা ও একটি ফরাসি কাপ জিতেছেন মেসি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গোল করেছেন ৩২টি। আর অ্যাসিস্ট ৩৫টি।
তবে মেসিকে যে উদ্দেশ্যে পিএসজি কিনেছিল, সেটি পূরণ হয়নি। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি ফরাসি ক্লাবটি। ইউরোপ সেরার আসরে দুই মৌসুমেই শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে পিএসজি। এরপর থেকেই মূলত মেসিকে দুয়ো দেয়া শুরু করে সমর্থকরা। যেটা অব্যাহত থাকে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। বিদায়টা মনের মতো না হলেও ম্যাচজুড়ে জমকালো আতশবাজি আর বর্ণিল আয়োজনে মেসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়েছে পিএসজি। প্যারিসের পার্ক দ্য প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে অম্ল-মধুর অনেক স্মৃতি সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের রূপকারের সঙ্গে। মেসির বিদায়ে বন্ধু ও ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়রও মাঠে হাজির হয়েছিলেন। গ্যালারিতে বসেই তিনি দেখেছেন মেসি-রামোসদের বিদায়ী ম্যাচ। পরবর্তীতে ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে নেইমার লিগ জয়ের আনন্দও উদ্যাপন করেন। আর প্রিয় বন্ধু মেসিকে বিদায় জানিয়েছেন কাছ থেকে। নেইমারেরও এটি শেষ ম্যাচ হতে পারত। কিন্তু ইনজুরির কারণে বাইরে থাকায় আপাতত সেটা হয়নি। ছয় মৌসুম ধরে পিএসজিতে খেলা নেইমারেরও মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার কথা আছে।
পিএসজি অধ্যায় শেষে মেসির সম্পূর্ণ মনোযোগ তার পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। বার্সিলোনা ও সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল এই দুই ক্লাবের যে কোনো একটিতেই তিনি পাড়ি জমাচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। আর সেই চুক্তির বিষয়ও চটজলদিই জানা যাবে বলে জোর গুঞ্জন।