সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৮ অপরাহ্ন

নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রভাবও মনে রাখতে হবে— ভারতকে দেবপ্রিয়

রিপোর্টার / ৭ বার
আপডেট : বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫

ভারত যখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে কথা বলে, তখন তাদের নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রভাবও মনে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক নিরুপমা সুভ্রামনিয়ানের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ছাপা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু ইস্যুসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি দেশটির সংসদে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর দুই হাজার ৪০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সালে এ সংখ্যা ৭২টি। এ সংখ্যা অতিরঞ্জিত কি না— এমন প্রশ্ন রাখা হয় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কাছে।

জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, এ ধরনের ঘটনা হিসাব করার বিভিন্ন উপায় আছে। কেউ অস্বীকার করছে না যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিদায় নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পুলিশ বাহিনী অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি তখনো স্থিতিশীল ছিল না।

‘এ ছাড়া বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে এসেছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বোঝা কঠিন হয়ে যায় যে কোনো হামলা ধর্মীয় কারণে হয়েছিল, নাকি সেই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন বলেই তাকে হামলার লক্ষবস্তু করা হয়েছিল,’— বলেন দেবপ্রিয়।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি— বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশ। আর ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানেরা বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই ভারত যদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে, তবে তাদের নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রভাবও মনে রাখতে হবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসেবে আপনি কতটা নিরাপদবোধ করেন— এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ ক্ষেত্রে আমি হয়তো সবচেয়ে ভালো উদাহরণ নই। আমি দুবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার ষাটের দশকের দাঙ্গার পর, ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়।

তিনি বলেন, কিন্তু আমার মা-বাবা কখনো বাংলাদেশ ছাড়েননি। আমি দেশে ফিরে এসেছি, এখানে বিনিয়োগ করেছি এবং নিজের জীবন গড়েছি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদ ছেড়ে আমি আমার দেশের জন্য কাজ করাটাকেই বেছে নিয়েছি।

‘আমার পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমার মা শেখ হাসিনার দলের সংসদ সদস্য ছিলেন, আর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের নিয়োগ দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তবে এসব ব্যক্তিগত সম্পর্ক আমার পেশাদার এবং তথ্য বা ঘটনাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কখনো প্রভাব ফেলে না।’

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে, আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকি নিই, তবে আমি বিশ্বাস করি যে এমন ঝুঁকি যেকোনো দেশে, যেখানে পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি প্রভাব ফেলছে, সেখানে সব নাগরিকের জন্যই রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের অনেক মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়—হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সমতল এলাকার আদিবাসীদের—রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি জাতি গঠনের ভিত্তি।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া এবং ‘বহুত্ববাদ’ যুক্ত করার জন্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে জানতে চাইলে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রথমত, এটি কমিশনের প্রতিবেদন— চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। এটি একটি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। এখনই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো খুব তাড়াহুড়ো হবে, কারণ এটি এখনও পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে।

‘দ্বিতীয়ত, যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকে। কিছু মানুষ অজ্ঞতা, মতাদর্শ, বা রাজনৈতিক স্বার্থে কট্টর কথা বলেন। যদি আমি ভারতকে শুধুমাত্র সেই লোকেদের মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে বিচার করি, যারা বাংলাদেশিদের— টার্মাইট (উইপোকা) বলে, তা ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি অবিচার হবে। তেমনি বাংলাদেশে কিছু মানুষ ইতিহাস নতুনভাবে লিখতে চায়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের মতামত জাতীয় নীতি নির্ধারণ করবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর