নারী অবমাননায় হেফাজতকে ৩ এনসিপি নেতাসহ ছয়জনের আইনি নোটিশ

প্রকাশ্য জনসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের প্রকাশ অযোগ্য ভাষায় অভিহিত করে অবমাননা করায় হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তিন নারী নেতাসহ ছয়জন। নারীদের প্রতি প্রকাশ্য সভায় এমন ভাষা ব্যবহার নতুন বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থি বলে বিবৃতি দিয়েছেন নোটিশদাতারা।
সোমবার (৫ মে) বিকেলে এনসিপির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি এ আইনি নোটিশ পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ছাড়া বাকি আর যে পাঁচজন হেফাজতে ইসলামকে নোটিশ পাঠিয়েছেন তারা হলেন— এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা ও নীলা আফরোজ এবং সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।
দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে প্রকাশ্যে যেভাবে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের অবমাননা করা হয়েছে, সেটি মেনে নেওয়া সুযোগ নেই। এ কারণে আমরা এনসিপির তিনজন নারী নেতা এবং তিনজন সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মিলে এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, নারীদের উদ্দেশে প্রকাশ্য সভায় এমন ভাষা ব্যবহার নতুন বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থি। বিশেষত, জুলাই অভ্যুত্থানে নারীর অবদান ছিল ঐতিহাসিক। এ দেশে নারী অবমাননার জায়গা নেই। নতুন বাংলাদেশ সবার হবে।
তারা বলেন, সরকারের প্রস্তাবনায় যারা নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে গেছেন এবং কাজ করেছেন, তাদের এ ধরনের অপমান বাংলাদেশের নারীদের জন্য ভয়ংকর। নারীর স্বাধীনতা ও জীবনমানের ওপর যে প্রস্তাবনা বানানো হয়েছে, সেটি নিয়ে দ্বিমত পোষণের সুযোগ থাকলেও গালি, বিশেষ করে যৌনবাচক গালি দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি নারীর মর্যাদা, স্বাধীনতা ও লড়াইকে অপমানিত করে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনসহ কমিশনই বাতিলের দাবি জানিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। এ দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি।
ওই সমাবেশেই একাধিক হেফাজত নেতা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিরোধিতা তো করেনই, তারা কমিশনের নারী সদস্যদের নিয়ে প্রকাশঅযোগ্য ভাষায় যৌনসূচক গালাগালি করেন। সমাবেশ থেকে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম।
আইনি নোটিশে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার কথাও তুলে করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটি কীভাবে এ ধরনের সমাবেশ আয়োজন করে, সে প্রশ্ন করা হয়েছে। ইসলামী যে আইন দেশে প্রচলিত, সে অনুযায়ী হেফাজত নেতারা তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করেছেন কি না, নোটিশদাতারা সে প্রশ্নও তুলেছেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের যে সমাবেশ থেকে নারীদের এমন অবমাননা করা হয়েছে, ওই সমাবেশেই উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সমাবেশে তিনিও বক্তব্য রাখেন। নারী অবমাননার বক্তব্যের সময়ও তিনি মঞ্চে ছিলেন। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত হাসনাতের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় বিচার দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে তাদের সমাবেশ ছিল। ওই দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন হাসনাত ভাই (হাসনাত আব্দুল্লাহ)। সেখানে নারীদের এভাবে অবমাননা করা হবে, সেটি হেফাজত নেতাদের দায়, তার দায় হাসনাত ভাইয়ের না।
হাসনাত আব্দুল্লাহর সামনেই মঞ্চ থেকে নারীদের অবমাননা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বা সংগঠন হিসেবে এনসিপি কোনো বিবৃতি দিয়েছে কি না— জানতে চাইলে দ্যুতি বলেন, হাসনাত ভাই এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দিয়েছেন কি না, আমার জানা নেই। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়েও হেফাজতের অবস্থানের সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই।