রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

৩০০ সংরক্ষিত আসন, বিয়ে-তালাক-উত্তরাধিকারে সমানাধিকারের সুপারিশ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের

রিপোর্টার / ০ বার
আপডেট : রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সাধারণ ৩০০ আসনের প্রতিটির বিপরীতে একটি করে সংরক্ষিত নারী আসন রাখার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। তবে এই ৩০০ আসনেও প্রত্যক্ষ ভোটে নারীদের সংসদ সদস্য নির্বাচন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পাশাপাশি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করে সব ধর্মের নারীকেই বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন। এর জন্য অধ্যাদেশ জারি করতে বলা হয়েছে সরকারকে। প্রতিবেদনে নারীবিষয়ক স্বতন্ত্র ও স্বাধীন কমিশনও গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারীবিষয়ক এই সংস্কার কমিশন সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৫টি অধ্যায়ে ভাগ করে প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য আলাদা আলাদা করে সুপারিশ করা হয়েছে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ

পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন নিয়ে তথ্য তুলে ধরেন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও অন্য সদস্যরা। এর আগে প্রতিবেদন জমার পর নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ‍্য তা দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু এ সরকারই করে যেতে পারবে, কিছু পরের নির্বাচিত সরকার করতে পারবে। নারী আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে।

শিরীন পারভিন হক আরও বলেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী–পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’। এতে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোর করে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, ধর্ষণের শিকার অন্য লিঙ্গের মানুষের বিচার ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আইনে ধর্ষণ ধারায় সংস্কার আনা, নারীবিদ্বেষী বয়ান-বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নারীর প্রতি সম্মানজনক, মর্যাদাপূর্ণ ও যথাযথ সংবেদনশীল আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কর্মসূচি নিতেও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে নারীর শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা এবং নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর সংরক্ষণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে কমিশন। সব প্রতিষ্ঠাতে ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি পূর্ণ বেতনে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া এবং সব প্রতিষ্ঠানে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের ‍সুপারিশও করা হয়েছে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ুন এখানে—

এর আগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর ১০ সদস্যের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভিন হককে।

কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন— ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাহীন সুলতান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আখতার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, নারীপক্ষের পরিচালক কামরুন নাহার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর