রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের ভাবনায় নিউইয়র্কের উইকেট

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৪৪ বার
আপডেট : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। সাধারণত আইসিসি ইভেন্টে স্পোর্টিং উইকেট হয়ে থাকে। সেখানে ব্যাটারদের পাশাপাশি সমান সুবিধা থাকে বোলারদেরও। কিন্তু নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে এমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল ভারত ও পাকিস্তানের লো স্কোরিং ম্যাচ আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে উইকেটের সার্বিক চরিত্র। এই মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ রাত সাড়ে ৮টায় মুখোমুখি হবে নাজমুল হোসেন শান্ত দল। যেখানে প্রতিপক্ষের চেয়েও বাংলাদেশ বেশি ভাবছে নতুন এই স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে নাগরিক টেলিভিশন।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটের রোমাঞ্চর জয়ের পর বাংলাদেশ এখন সুবিধাজনক স্থানে। তবে জয় নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারলেও ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা কমছে না। তার পরেও এই জয় নিশ্চিত ভাবেই গোটা দলকে অনুপ্রাণিত করছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা দুই জয়ে এখন সুপার এইট নিশ্চিতের এগিয়ে গেছে আরও এক ধাপ।
দুই দলের পরিসখ্যানের দিকে তাকালে অবশ্য হতাশই হতে হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৮ ম্যাচ খেলে কোনও জয় নেই বাংলাদেশের। ২০০৮ সালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সবচেয়ে কম ১২ রানের ব্যবধানে হেরেছিল। এরপর সেই ব্যবধানটা কেবল বেড়েছেই। সবশেষ ২০২২ বিশ্বকাপেও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছে। সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হচ্ছে।
শুধু মুখোমুখি লড়াইয়েই নয়, নিউইয়র্কের মাঠে খেলার অভিজ্ঞতায়ও অনেকটুকু এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপপর্বের প্রথম দুটি ম্যাচ প্রোটিয়ারা খেলেছে এখানেই। দুই ম্যাচেই শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৭৭ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে। পরের ম্যাচেও নেদারল্যান্ডসকে ১০৩ রানে থামিয়ে জিতেছে ৪ উইকেটে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে এই নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র ১২২ রান তুললেও রোহিত শর্মারা তুলেছিলেন ১৮২ রান। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি তাই বেশ কঠিনই হতে যাচ্ছে।
যদিও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে আশাবাদের কথাই শুনিয়েছেন, প্রতিটি ম্যাচই চাপের। আমাদের জন্য এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা এমন কিছু করতে চাই, যা আগে কখনও করতে পারিনি, দ্বিতীয় ধাপে যেতে চাই। সেই লক্ষ্য পূরণের পথে আরেকটি বড় সুযোগ এই ম্যাচ।
নিউইয়র্কের ড্রপ ইন উইকেট অনেকটাই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো। এখানে বল কিছু ধীরগতিতে আসে। ব্যাটাররা তাদের সহজাত ব্যাটিং করতে পারেন না। চাবুকের মতো না চালিয়ে কৌশলী ব্যাটিং করার মধ্য দিয়ে মিরপুরে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। মিরপুরের মতো নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও ব্যাটারদের চেয়ে বোলারদের ভূমিকা বেশি থাকে। শুরুতে বাংলাদেশ ফিল্ডিংয়ের সুযোগ পেলে মূল কাজটা করতে হবে বোলিংয়ে। যতটা সম্ভব কম রানে আটকে রাখতে হবে প্রোটিয়াদের। ব্যাটিংয়ে আগে নামলে কৌশলী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেক্ষেত্রে টপ অর্ডারের দায়িত্বশীল ক্রিকেট খেলতে হবে। কিন্তু টপ অর্ডার নিয়েই চিন্তায় টিম ম্যানেজমেন্ট।
নিউইয়র্কে ব্যাটিং করাটা কঠিন বলেই আশা দেখছেন হাথুরুসিংহে, ব্যাটারদের জন্য উইকেট খুব সহজ নয়। এই কারণেই আসলে দুই দল একই কাতারে চলে আসছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ বেশ ভালো। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে ওদের সঙ্গে খুব ভালো লড়াই করতে পারবো।
লম্বা সময় ধরে সংগ্রাম করছে বাংলাদেশ টপ অর্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টপ অর্ডারদের বার্তা দিয়ে রেখেছেন প্রধান কোচ, যে কোনও খেলাতেই নিজের শক্তির জায়গায় অটল থাকতে হয়। যে কোনও ব্যাটারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কন্ডিশন। পরিস্থিতি ও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে কাজটা কঠিন। প্রথমে ব্যাট করলে আমাদের কী করতে হবে, পরে ব্যাট করলে কী করতে হবে, এসব নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা। নিজের শক্তির জায়গায় স্থির থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটির বড় অংশই হলো কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে মূল লড়াই হবে বোলারদের। যে দলের বোলাররা সফল হবেন, তাদের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনজুরি আক্রান্ত শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছু ঠিক থাকলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ফিরতে পারেন তিনি। তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে শরিফুলের অভাব খুব বেশি বুঝতে দেননি তানজিম হাসান সাকিব। আজও তার একাদশে থাকার সম্ভাবনা জোরালো। তার সঙ্গে অভিজ্ঞ দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানতো আছেনই। দুইজনই লঙ্কানদের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন। এই তিন পেসার ছাড়া লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন যে বার্তা দিয়েছেন, সেটা পুরো দলকেই আত্মবিশ্বাসী করে রাখতে পারে। দুর্দান্ত লাইন-লেন্থ আর অসাধারণ ধারাবাহিকতায় লঙ্কান ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করেছেন তিনি। পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিনার সাকিবও রয়েছেন।
তবে আসল পরীক্ষাটা দিতে হবে ব্যাটারদেরই। লঙ্কান বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে সংগ্রাম করেছে, তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ইয়ানসেন, নরকিয়া, রাবাদাদের সামনে কেমন করে সেটি দেখার অপেক্ষায় সমর্থকরা। এই মাঠেই প্রোটিয়ারা লঙ্কানদের ৭৭ রানে অলআউট করেছিল। এবার তাদের সামনে বাংলাদেশ। লিটন-শান্ত-সাকিবরা কি পারবেন প্রোটিয়া বোলারদের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর