তারেককে এনে সাজা বাস্তবায়ন করা হবে: শেখ হাসিনা

কেউ যাতে আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়াকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে। বিএনপি জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেট থেকে বের হয়েছে। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না।আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন।।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনসহ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারকে বলব, তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনি-দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব। শেখ হাসিনা বলেন, যেসব দেশ আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে, তাদের ক্যাপিটল হিলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয়জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে। ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। বিএনপি-জামায়াত থাকতে দেশের কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নয়ন পোকার মতো খেয়েছে। উন্নয়ন করতে মানসিকতা থাকা দরকার। দিকদর্শন থাকা দরকার।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এরা কীভাবে অত্যাচার করেছে, তা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যে নেতাকর্মীরা বিএনপির হাতে ছেঁচা মার খেয়েছে, তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক।তিনি বলেন, অগ্নি সন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতা বিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, এটি পরিষ্কার কথা। ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে, আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না। এবার যেন আর কোন বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যে হাত আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনো দিন বলিনি, এখন বলব। আর মার খাওয়ার সময় নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই একেকজন বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের বাগান করেছে। মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। ছয় বছরের মেয়ে থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেই পূর্ণিমা, ফাহিমা শুরু করে সারা বাংলাদেশের কত নাম বলব? সবার চিকিৎসা করতে হয়েছে। অনেকে লজ্জায় নামই প্রকাশ করেনি। তিনি বলেন, ২০০১ সালে যে অত্যাচার তারা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর গুনে গুনে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করিনি। আমরা তো তাদের ওপর এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো, আমি তখনই দেশে চলে আসছি। ওর বাপও তো আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনও পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ, দেশেরে বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে!
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটের দল! সেই ৭৫ থেকে ২১ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দিতে আসবে, সেই হাত আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, এখনও পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখে চোখের সামনে স্বামী-সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কীসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নেই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না, এটি আমার পরিষ্কার কথা। প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের বলতে হবে, তারা কি শান্তিতে থাকতে চায়, নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়? তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা-খুন, মানি লন্ডারিং- এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষের একটি ক্ষতিও যেন করতে না পারে। দোকানপাট, সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এইভাবে আমার কৃষক-শ্রমিক, আমাদের নেতাকর্মী- কারো গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নেই।
গণমাধ্যমের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, যে সব মিডিয়া এখন বিএনপির কাছে ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন, আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারতো না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীই হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। তিনি বলেন, হাওয়া ভবনও আমরা খুলিনি, বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। এখন হাওয়া ভবন এলে আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না। আজ বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম-আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দিইনি তো। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। মিডিয়া একটা উল্টা-পাল্টা লিখলেই তো মারতো। তার পরেও এতো আহ্লাদ কীসের, এত তেল মারা কীসের। কত তেল আছে আমি দেখব।