শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

ঢাবি ক্যাম্পাসজুড়ে পুলিশ, হলগুলো ফাঁকা

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ২৩ বার
আপডেট : বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে হল ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। যদিও কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা হল ছাড়লেও ঢাকা ছাড়বেন না। তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। রাত ৮টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাস ও হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ঢাবির বেশিরভাগ হল থেকে শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন বলে জানান হলের সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন ঢাবির মুহসীন, জসিমউদদীন, বঙ্গবন্ধু, জিয়া, বিজয় ৭১ ও এফ রহমান হল ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সব শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে গেছেন।
জসিমউদদীন হলের স্টাফ আমিনুল ইসলাম বলেন, সবাই হল ছেড়ে চলে গেছেন। শিক্ষকরা কয়েকবার এসে রাউন্ড দিয়েছেন। একই কথা বলেন জিয়াউর রহমান হলের গার্ড মিশু।
ঢাবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাফি আহমেদ মুহসীন হল থেকে বের হওয়ার সময় বলেন, আমি সবশেষ হলে ছিলাম। হলে আর কেউ নেই। আমি আজ এক বন্ধুর বাসায় থাকবো। কাল বাড়ি যাবো। হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলের স্টাফ আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘হলে আর কেউ নেই। সবাই বের হয়ে গেছেন। আমরা দুইবার চেক করেছি।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহতদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত গায়েবানা জানাজা কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন এলাকা ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কয়েকজন শিক্ষার্থী এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকায় দুপুর থেকেই অবস্থান করছিলেন আন্দোলনকারীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নিহতদের গায়েবি জানাজার জন্য বিকাল ৪টায় রাজু ভাস্কর্য এলাকায় যাত্রা শুরু করেন তারা। এ সময় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যে আসতে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে পুলিশ হলপাড়া এলাকায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ফের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের দলবেঁধে হল ত্যাগ করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী মাহিম হোসেন বলেন, গত দুই দিন আগে আমাদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হয়, আজ ঠিক একইভাবে পুলিশ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমরা হলে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে আজ পুলিশ যেকোনও সময় হলে রেইড দিতে পারে। তবে হল ছাড়লেও আমরা আছি, আমরা কোথাও যাচ্ছি না। আমাদের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, তারা হল ছাড়লেও যেন ঢাকা না ছাড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলন এখানেই শেষ হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই আমরা আন্দোলন শুরু করবো।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে কোনও আন্দোলন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের জানিয়ে দেবো। আজ পুলিশের হামলায় কতজন আহত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতজন আহত হয়েছেন তা আমার নির্দিষ্ট করে জানা নেই। তবে চোখের সামনে অনেককে আহত হতে দেখেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছেন। অপরদিকে নীলক্ষেত ও শাহবাগ এলাকায় রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে আগত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান রয়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার ব্যাপারে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে কেউ তারা কোনও কথা বলতে রাজি হননি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর