সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধন হয়। এই অধিবেশনেই ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন বসেছিল ভার্চুয়ালি। এ বছর সশরীরে সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে মিলিত হলেন বিশ্ব নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে সাংবাদিকদের বলেন, মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ‘মানুষের কথা চিন্তা করে’ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসেছেন। এই কঠিন সময়ে ঝুঁকি জেনেও প্রধানমন্ত্রী এখানে (যুক্তরাষ্ট্র)এসেছেন। এসেছেন দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য। এটা সব সময় তার হৃদয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মহামারী মোকাবেলা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, খাদ্য নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব দেবেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।

ছবি: পিআইডি
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার নিউ ইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর মধ্যে ১৯ মাস পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ইতালি সফরে গিয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পরদিন সকালে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের বাগানে একটি ‘হানি লোকাস্ট’ গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। জাতিসংঘ সদরদপ্তরের উত্তরের লনের ইউএন গার্ডেনে সেই গাছটির পাশেই বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে তার বাণী সম্বলিত একটি বেঞ্চও উন্মুক্ত করেন। পরে শেখ হাসিনা ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পান তিনি। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তাকে বর্ণনা করেন ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন অব দ্য ডে’ হিসেবে।
আফগান নিয়ে সার্ক সভা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকেদর জানান, জোটভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে সার্ক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করবেন। এখন আফগান ইস্যুটি বড় ইস্যু, এই ব্যাপারে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা হবে। আমরা আফগানের ডেভেলপমেন্টা দেখতে চাই। তাদের নতুন সরকার কী ধরনের হয়, পলিসি কী ধরনের হবে, প্র্যাকটিস কী ধরনের হবে, তার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে আমরা কী করব।জাতিসংঘের মহাসচিবের অনুরোধে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। বাংলাদেশের কেউই এখন আফগানিস্তানে আটক নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই/তিন জন স্বেচ্ছায় ওখানে আছেন। শুনেছি তারা বিয়ে করেছেন ওখানে এবং বিয়ে করায় তারা ওখানে আছেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
আফগানিস্তান থেকে জঙ্গিবাদের আশঙ্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান আমাদের শত্রু না। আফগানিস্তানে একটি সমস্যা ছিল এক সময় যে ওখানে কিছু জঙ্গি-টঙ্গি হয়েছিল। তখন কোনো কোনো লোক এসে আমাদের দেশে জঙ্গির চেষ্টা .. আমরা জঙ্গি নির্মূল করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তান ‘জঙ্গিমুক্ত’ থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা চাই আফগানিস্তানের উন্নতি হোক। আমরা সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সরকার হবে এবং সেই সরকার যদি প্রগ্রেসিভ হয় এবং ইনক্লুসিভ হয়, দেশের সব জনগণকে নিয়ে দেশ পরিচালিত করে, তাহলে অবশ্যই সেই সরকারকে আমরা সমর্থন দেব।