মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনে বছরে বাস্তুচ্যুত ১০ হাজার মানুষ, বেশি ক্ষতি শিশুদের

রিপোর্টার / ০ বার
আপডেট : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতিবছর বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন ১০ হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত মানুষের মোট সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। এদের অধিকাংশই উপকূলীয় এলাকা থেকে শহরমুখী হয়েছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তনের এই অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে খুলনায় চতুর্থ বার্ষিক জলবায়ু শিশু সম্মেলনে কি-নোট উপস্থাপনায় এসব তথ্য তুলে ধরেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। সম্মেলনে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০০ শিশু অংশ নেয়।

অধ্যাপক জাকির বলেন, উপকূলে প্রতিবছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে আঘাত হানে। এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নেয়। পরে সেই ঋণ শোধ করতে না পেরে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হয়। একপর্যায়ে পরিবারকেও শহরের দিকে নিয়ে যায়।

পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলের অধিকাংশ স্থানে লবণাক্ততার মাত্রা অনেক বেশি বলে জানান এই অধ্যাপক। বলেন, এর কারণে কৃষিকাজ করা সম্ভব নয়। আর মৎস্য ঘেরগুলো এখনো প্রভাবশালীদের দখলে, সেখানে কাজের জায়গা খুবই সীমিত। ফলে উপকূলের মানুষকে কাজের সন্ধানে প্রতিনিয়ত শহরমুখী হতে হচ্ছে। এর ফলেও বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে।

তবে শহরে এসেই তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারছেন না জানিয়ে অধ্যাপক জাকির বলেন, শহরে খাবার খরচ অনেক বেশি। পাশাপাশি বাসস্থানও অনেক ব্যয়বহুল। এখানে জীবনধারণ করতে তারা হিমশিম খায়। অধিকাংশ বস্তি এলাকায় বা সরকারি জমি দখল করে গড়ে ওঠা বাসাতেই ঠাঁই হয়, যেখানে নিরাপদ পানি বা স্যানিপেশন সুবিধা অনেক নিম্নমানের। ফলে পরিবারের বয়স্করা বাস্তুচ্যুতির প্রভাবে যতটুকু আঘাত পান, শিশুরা তার থেকেও বেশি আঘাত পান।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) খুলনা ফিল্ড অফিস প্রধান কাওসার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের ঝুঁকিমুক্ত করতে দেশের জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। শিশু অধিকার রক্ষায় পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী অরক্ষিত হয়ে পড়বে।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৮০ শতাংশই ক্ষতির শিকার হয় নারী ও শিশু। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ বন্ধ করা যাবে না। তবে ক্ষতি কমানো সম্ভব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুধু টাকা-পয়সা, সম্পদ নয়, বরং অক্সিজেন, নদী, পরিবেশ রেখে যেতে হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শিশু। দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরাই এবং তারা জলবায়ু প্রভাবজনিত আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পায় না। পাশাপাশি শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় অংশগ্রহণ ও তাদের দক্ষতা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেজেএসের নির্বাহী পরিচালক এ টি এম জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতার শিকার। ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, নদীভাঙন এসব শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে আনে তা নয়, সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের বাসস্থান, শিক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি আঘাত হানে।

জাগ্রত যুব সংঘের (জেজেএস) জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উপকূলীয় শিশু ফোরামের সঙ্গে জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (বিএমজেড) ও কিন্ডারনটহিলফ (কেএনএইচ) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। রোববার ও সোমবারের এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় শিশুরা ২১টি দাবি উত্থাপন করে। শিশুরা তাদের এসব দাবি পূরণের জন্য নীতি নির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর