চলে গেলেন বাজপাখি মার্টিনেজ

১১ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশ সফরে আসা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মার্টিনেজ বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। আজ বিকেল সাড়ে চারটায় কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা মার্টিনেজের। এর আগে আজ ভোর সোয়া পাঁচটায় বাংলাদেশ সফরে আসেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম এই নায়ক।
কাকডাকা ভোরে ঢাকায় পা দিয়েই চলে যান তিনি নির্ধারিত হোটেলে। সেখান থেকে সকাল ৯টার দিকে চলে আসেন প্রগতি সরণিতে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড নেক্সটের কার্যালয়ে। যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। ওই অনুষ্ঠানেই প্রতিনমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং মাশরাফির সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায় এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে।
সবার অপেক্ষা একঝলক “বাজপাখিকে” দেখার। বলছি বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কথা। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। ভোরে ঢাকার পা রাখা বিশ্ব তারকাকে কাছ দেখার সুযোগ পেলেন না সমর্থকরা। আর মিডিয়া কর্মীদের সুযোগ হলো না মার্তিনেজকে একটু ফ্রেমবন্দী করা কিংবা ঢাকায় আসার অনুভূতিটা জানার ও উৎসুক আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জানানোর। এভাবেই মার্তিনেজকে আড়াল করে রাখলো আয়োজক নেক্সট ভেঞ্চার।
গেল বছর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে অসাধারণ সেভে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারাতে বড় ভূমিকা রাখেন ৩০ বছর বয়সী গোলকিপার। টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষার আগে কোলো মানির প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এমন পারফরম্যান্সে মেসির পর মার্তিনেজকে সমর্থকরা দিয়েছে সেরার আসন। বাংলাদেশেও মার্তিনেজের সমর্থক সংখ্যা অসংখ্য। তাকে ভালোবেসে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা ডাকেন বাজপাখি নামে। অথচ সেই সমর্থকদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে।
দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তিকে পাত্তা না দিয়ে হোটেলে মাত্র ঘণ্টা তিনেক বিশ্রাম নিয়েই নেক্সট ভেঞ্চার্সের অফিসে যান মার্তিনেজ। সকাল ৯টা ৭ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে নেওয়া হয় সেখানে। উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছেই আসতে দেওয়া হয়নি সে সময়। মার্তিনেজের সঙ্গে দেখা করতে সে সময় উপস্থিত হন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তিনি মার্তিনেজের হাতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি। মাশরাফীর সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও মেয়ে। তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন মার্তিনেজ।
নেক্সট ভেঞ্চার্সের অতিথিদের তালিকায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কোন কর্মকর্তা ও সাবেক ফুটবলারদের কারও জায়গা হয়নি। ফলে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে উম্মাদনার ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা না নিয়েই কলকাতা যেতে হবে মার্তিনেজকে। নেক্সট ভেঞ্চার্সের পক্ষ থেকে মার্তিনেজকে দেওয়া হয় কিছু উপহার। যার মধ্যে অন্যতম বাজপাখির মুর্তি, নৌকা ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী। প্রায় পৌঁনে ১ ঘণ্টা নেক্সট ভেঞ্চার্সের অফিসে সময় কাটান মার্তিনেজ। এরপর নেমে আসার সময় মিডিয়াকর্মীদের ভীড় দেখে কাছে আসতে চেয়েছিলেন মার্তিনেজ। নিজ দেশ নিয়ে এদেশের মানুষের মাতামাতির কথা জানা বলেই হয়তো ঢাকায় আসার অনুভূতিটা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে নেক্সট ভেঞ্চারের লোকজন সে সুযোগ দেয়নি। তাকে দ্রুত বেজমেন্টে নিয়ে তুলে দেওয়া হয় কালো কাচে ঘেড়া কালো গাড়িতে। এমনকি গাড়ির কাচও নামাতে পারেননি আর্জেন্টাইন তারকা। নেক্সট ভেঞ্চার্সের অফিস থেকে বের হয়ে তাকে নেওয়া হয় কভিড পরীক্ষা করাতে। দুপুরে তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে কভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়া বাধ্যতামূলক বলেই কভিড পরীক্ষা করাতে হয়েছে মার্তিনেজকে।
ভারতীয় এজেন্ট শতদ্রু দত্তর মাধ্যমে নেক্সট ভেঞ্চার্স মাত্র ১১ ঘণ্টার জন্য মার্তিনেজকে এনেছে। তবে এই সময়ের মধ্যেই তারা কিছু সময়ের জন্য পারতো সাধারণ সমর্থকদের নিয়ে একটা আয়োজন করছে। তারা পারতো অল্প সময়ের জন্য একটা সংবাদ সম্মেলন করতে। তাতে লাভবান হতো দুই পক্ষই। এ ধরনের আয়োজনে অখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি যেমন অরচার পেতো, তেমনই সাধারণ সমর্থক ও মিডিয়ার মাধ্যমে কোটি ভক্ত জানতে পারতো মার্তিনেজের বাংলাদেশ নিয়ে অনুভূতগুলো।