ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন স্পেন

দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও শিরোপা জয়ের হাসি হেসেছে স্পেন। লা রোজারা প্রথমবারের মতো জিতে নিয়েছে উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা। রবিবার রাতে এবারের তৃতীয় আসরের ফাইনালে ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়াকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। হল্যান্ডের রটারডামের দ্য কুইপ স্পেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদলের নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য অমীমাংসিত থাকে। এরপর টাইব্রেকারে গোলরক্ষক উনাই সিমোনের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে শেষ হাসি হেসেছে স্পেন। এর ফলে ২০২১ সালে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ, ইউরো ও নেশন্স লিগের শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছে স্প্যানিশরা।
এর আগে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে স্বাগতিক হল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে ইতালি। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জয়সূচক গোল করা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রড্রি। ২০১০ সালে নিজেদের ইতিহাসে একমাত্র বিশ্বকাপ জিতেছে স্পেন। এর আগে ২০০৮ সালে ইউরো ও ২০১২ সালে আবারও একই আসরে শিরোপা জয় করে তারা। অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয় করে স্পেন।
এরপর থেকে পতনের শুরু তিনবারের ইউরো ও একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। দীর্ঘদিন তারা কিছুতেই সফল হতে পারছিল না। অবশেষে ১১ বছর পর শিরোপা জয়ের মধুর স্বাদ পেয়েছে স্প্যানিশরা। কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নেয়া স্পেন নেশন্স লিগের গত আসরেও ফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের আসরে ফ্রান্সের কাছে হেরে হৃদয় ভেঙেছিল তাদের। এবার ক্রোয়েটদের কান্নায় ভাসিয়ে শিরোপা জিতেছে স্পেন। দুই বছর পর পর হওয়া নেশন্স লিগের ২০১৯ সালের প্রথম আসরে শিরোপা জয় করে পর্তুগাল। নিজেদের ইতিহাসে কখনো বড় কোনো শিরোপা জিততে না পারা ক্রোয়েশিয়া এবার দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পুরো ম্যাচে দাপুটে পারফর্ম্যান্সও ছিল মডরিচ, পেটকোভিচদের। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাদের।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে চমক জাগিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া, শেষ পর্যন্ত তারা হয়েছিল রানার্সআপ। এরপর ২০১৮ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে দলটি ফের উঠে আসে ফাইনালে। সেবারও ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সবশেষ কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েটরা তৃতীয় হয়েছে। বারবার ফাইনাল ও সেমিতে উঠে আসা ক্রোয়েটরা একটি শিরোপার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল। কিন্তু আরেকবার ফাইনালে হৃদয়ভাঙা হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে তাদের।
ফাইনালে স্পেন ও ক্রোয়েশিয়া দু’দলই তাদের প্রথম তিনটি করে শটে গোল আদায় করে। ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ শট নিতে এসে ব্যর্থ হন লভেরো মাজের। তার শট ঝাঁপিয়ে পড়া অবস্থায় পা দিয়ে ফিরিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক সিমোন। এরপর মার্কো অ্যাসেনসিও গোল করলে এগিয়ে যায় স্পেন। ক্রোয়েশিয়ার চতুর্থ শট নেওয়া ইভান পেরিসিচ সফল হলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪। এসময় স্পেনের হয়ে শেষ শটে আইমেরিক লাপোর্টে গোল করতে পারলেই তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। কিন্তু তার শট বারপোস্টে লেগে প্রতিহত হলে নতুন আশা জাগে ক্রোয়েট তাঁবুতে। কিন্তু পরের শটে ব্রুনো পেটকোভিচের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের স্প্যানিশ কিপার সিমোন। ফলে আবার সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। রিয়াল মাদ্রিদের রাইটব্যাক ডানি কারভাজাল সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি। সহজেই তিনি লক্ষ্যভেদ করে স্পেনকে উল্লাসে ভাসান।
ম্যাচ শেষে কারভাজাল বলেন, আমাদের জন্য এটা শিরোপা জয়ের দারুণ একটি সুযোগ ছিল। কাতার বিশ্বকাপে আমরা আগেভাগেই বিদায় নিয়েছিলাম। এবার নিজেদের প্রমাণে কোনো ছাড় দেইনি। পেনাল্টি নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গত কিছুদিন আমরা এটা নিয়েই কাজ করেছি। আমি জানতাম পেনাল্টি শুটআউটে ঠিক কোন কাজটি আমাদের করতে হবে। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক হয়েছে।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়া রড্রি বলেন, আমরা সত্যিই খুব খুশি। এটা একটি কঠিন ম্যাচ ছিল। সবকিছুই কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই প্রজন্মের কাছে যেমন প্রত্যাশার চাপ আছে, তেমনি দলের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিও অনেক। আমরা মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী ছিলাম। এখনো অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু শিরোপা জয়ের আনন্দই আলাদা, আমরা এখন এই জয় উদযাপন করব।
স্পেন কোচ ডি লা ফুয়েন্টে বলেন, আমি এই দলটি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানি। প্রতিটি পর্যায়ে আমি তাদের জিততে দেখেছি। স্পেনের জনগণ, খেলোয়াড় ও স্টাফদের জন্য আমি খুব খুশি। আশা করছি ২০১০ বিশ্বকাপের পর থেকে যে আশায় আমরা মাঠে নেমেছি তা ফিরিয়ে আনতে পারব। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়া কোচ জøাটকো ডালিচ বলেন, আমরা একের পর এক পদক জয় করছি, যা অসাধারণ। ইতোমধ্যেই তিনটি পদক পাওয়া হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় আমাদের মধ্যে এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে। এ ধারাবাহিকতায় একদিন আমরাও সফল হবো।