মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আর প্রশ্রয় দেবে না সরকার

ভয়েস বংলা প্রতিবেদক / ১৬ বার
আপডেট : শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীনরা। তাই কোটা আন্দোলনকে আর প্রশ্রয় দিতে চায় না সরকার। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর কথায় সেটি উঠে এসেছে। আন্দোলন যাতে আর এগোতে না পারে সেজন্য পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এতে কোটা ফিরলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
আন্দোলন রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের অন্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ করছেন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা বাড়াতে বা কমাতে পারবে। কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। কিন্তু এরপরও আন্দোলন থেকে সরেননি শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার করে সংসদে আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুরুতে কিছু না বললেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে আর ভালো চোখে দেখছে না সরকার। আদালতের রায়কে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে বলেই মনে করছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তারা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আদালতের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও আন্দোলন অব্যাহত রাখা অস্বাভাবিক এবং এর পেছনে অন্যকিছু আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা এ আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সরকার আন্দোলনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়ায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্দোলনের বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করেন। চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের ঘটনায় এ মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে অজ্ঞাতপরিচয় অনেক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক মহল শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। আমরা বিশ্বাস করি না কোমলমতি সব শিক্ষার্থী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করতে চায়। শুধু যারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তারাই আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে।
যে কোনো আন্দোলন হলেই বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা সেটাকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। এখন তারা কোটা আন্দোলনে ভর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ তাদের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশকে আমরা বলেছি, এদের ডিমান্ড যেটা আছে, সেটা আমরা শুনবো। কিন্তু শোনারও একটা লিমিট বোধহয় থাকে। তারা বোধহয় এগুলো ক্রস করে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অনুরোধ না রাখলে আপনারা অ্যাকশনে যাবেন কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হলো তারা শিক্ষিত, মেধাবী। তারা কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবে? তারা এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করে তারা ফিরে যাবেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশের অ্যাকশনটা কখন আসে- যখন অপারগ হয়ে যায়, যখন অগ্নিসংযোগ করতে যায়, যখন ধ্বংস করতে যায়, যখন জানমালের নিশ্চয়তার অভাব হয়ে যায়, যখন অনৈতিকভাবে কোনো সিচুয়েশন তৈরি হয়। সেগুলো করলে পুলিশ বসে থাকবে না।
শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কথা গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আদালতের বিষয় আদালতে সমাধান হোক। এ সমাধানের পর যদি আরও কিছু আলোচনা করতে হয় সেটি আলোচনা করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত।তিনি বলেন, দেশের কল্যাণে আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমাদের সন্তানদের কল্যাণ যা করা লাগে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি।
একটি গোষ্ঠী দেশের উন্নয়নের সমালোচনা করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা কেন একটি সহজ সমাধান রেখে জটিল জায়গা বেছে নিচ্ছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো আপনারা কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে যথাযথ জায়গাতে যাবেন। আপনাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করবেন। আমি মনে করি সুন্দরভাবে সেটি সমাধান হওয়া সম্ভব। আমি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাবো কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমরা যাতে ভিন্ন জায়গায় না যাই।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন স্কেলের নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। গত ১০ জুলাই কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর