বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন

কলকাতায় বৈঠকে যৌথ নদী কমিশন, আলোচনায় গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন

রিপোর্টার / ১১ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ইস্যু পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে বসেছেন দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে তারা গঙ্গা নদীর ফারাক্কা পয়েন্টে পানি পরিমাপ করেছেন। পানি কম পেলে কোন দেশ কী কী সমস্যার মুখে পড়ে, তা নিয়েও এরই মধ্যে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তারা। আরও আলোচনার পর দুই দেশ পানিবণ্টন নিয়ে কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।

এ বৈঠকের মধ্যেই আলোচনায় উঠে এসেছে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি। ২০২৬ সালে শেষ হতে যাওয়া এই চুক্তির নবায়নের বিষয়টিও এবারের জেআরসি বৈঠকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে জানাচ্ছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি হবে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত, জেআরসি বৈঠকের প্রভাব এর ওপর খুব একটা থাকবে না।
গঙ্গা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারত ঠিকমতো পানি দিচ্ছে কি না, তা পরিমাপের নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বাংলাদেশের একটি দল ফারাক্কা ব্যারাজ এলাকা পরিদর্শন করেছে। ডয়েচে ভেলে বাংলার প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালের পর এটি ৮৬তম বৈঠক। এই আলোচনার কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ যাবে। গঙ্গায় পানির মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই মুহূর্তে পানিবণ্টনের পরিস্থিতি কী হবে।
মঙ্গলবারের পরিদর্শনে বাংলাদেশের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেআরসি, বাংলাদেশের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। এ সময় ভারতেরও ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির যৌথ নদী কমিশনের সদস্য শারদ চন্দ্র।
এ দিন ফারাক্কা পরিদর্শনের পর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা আবুল হোসেন ডয়েচে ভেলেকে বলেছিলেন, পানিবণ্টন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তবে এ বছর পানিপ্রবাহ কম থাকায় দুই দেশই পানি কম পাচ্ছে।
মঙ্গলবার যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা গঙ্গায় পানি পরিমাপ করেন। ছবি: ডয়েচে ভেলে বাংলা
এরপর বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কলকাতায় দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বাংলাদেশের পক্ষে আবুল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আবু সৈয়দ, মেদরি জাহান, মোহাম্মদ শামসুজ্জাহানসহ অন্যরা। ভারতের পক্ষে শারদ চন্দ্রের নেতৃত্বে ফারাক্কা ব্যারেজের মহাব্যবস্থাপক আর ডি দেশপান্ডেসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন কম পানি পাওয়ার কারণে কী কী সমস্যা হয় তা নিয়ে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জানান, পানি কম পেলে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সেচ নিয়ে সমস্যা হয়। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে। বিশেষ করে সমস্যা দেখা দেয় সুন্দরবন অঞ্চলে।
বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিরাও তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, গঙ্গায় পানিপ্রবাহ কম থাকলে পানি ভাগাভাগিও কম করতে হবে।
শুক্রবারও (৭ মার্চ) এ নিয়ে বৈঠক করবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। সূত্র বলছে, এ দিন বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের পাশাপাশি তথ্য ভাগাভাগি, বন্যা রিপোর্ট, সীমান্তের নদীগুলো নিয়ে দুই দেশের পরিকল্পনা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্ত আলোচনা করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য যৌথ নদী কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে থাকে। সাধারণত এই বৈঠকের একটি বাংলাদেশে হলে পরেরটি হয় ভারতে। এবারের বৈঠক হচ্ছে ভারতের কলকাতায়, যেটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রথম বৈঠক।

আলোচনায় গঙ্গা চুক্তি নবায়ন
এই বৈঠকে কেবল পানিবণ্টন নয়, গঙ্গা চুক্তি নবায়নও আলোচনায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি হয় ৩০ বছর মেয়াদে। সে হিসাবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, এবারের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে এটিও অন্যতম আলোচনার এজেন্ডা হিসেবে থাকছে। সে কারণেই শুক্রবারের বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন করা নিয়ে কাজ করবে।
তবে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যৌথ নদী কমিশনের এবারের বৈঠকে মূলত পানিবণ্টন কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। চুক্তি নবায়নের কাজটি করবেন আরও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পরই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর