এনডিটিভিটিকে আওয়ামী লীগের ‘বিকল্পহীন’ নেতা জয়

দলের কর্মীরা চাইলে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শুক্রবার (৯ আগস্ট) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জয় আরও বলেছেন, তার মা প্রবাসে থাকতে চান না। তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। জয় জোর দিয়ে বলেন, গত দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই অবসরে যেতে চেয়েছিলেন তার মা। তবে তিনি শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয়টিও উড়িয়ে দেননি।
এনডিটিভিকে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমি গত রাতে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেছি। এখন পর্যন্ত তার কোনও পরিকল্পনা নেই। ভিসা বা আশ্রয়ের জন্য আবেদনের বিষয়টি গুজব—কোনটাই সত্যি নয়। জয় বলেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। হতে পারে তিনি রাজনীতিতে ফিরবেন অথবা তিনি অবসরে যাবেন। এটা কোনও বিষয় নয়।
জয় বলেন, বাংলাদেশেই তার বাড়ি। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই হয়তো তার শেষ মেয়াদ ছিল। তার বয়স এখন ৭৬ বছর। টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে অবসর সময় কাটাতে চান তিনি। এটাই তার স্বপ্ন ছিল। তিনি কখনোই বাংলাদেশের বাইরে থাকতে চাননি। শেখ হাসিনা কি তাহলে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারেন?
এনডিটিভির এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জয় বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) তার দেশের জন্য রাজনীতিতে ছিলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়। গত দুই মেয়াদ থেকেই তিনি অবসরে যেতে চাচ্ছিলেন। আসলে তিনি নির্বাচনের আগে আমাকে রাজনীতিতে আসার জন্য চাপও দিয়েছিলেন। আমাদের পরিবারের কখনও ক্ষমতা বা রাজনীতির উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। যেহেতু এই সংকটময় সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেতৃত্বশূন্যতায় রয়েছেন, তাহলে এখন তিনি (জয়) কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইটি উদ্যোক্তা বলেন, অবধারিত বা বিকল্পহীনভাবেই আমি এখন দলের প্রধান মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমি কখনও রাজনীতিতে আসতে চাইনি। আমার কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। কিন্তু যখনই আমি জানলাম আমাদের দলের নেতাদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের ছেড়ে যেতে পারবো না। আওয়ামী লীগের এখনও লাখ লাখ অনুসারী আছে, তা রাতারাতি বিলীন হয়ে যাবে না।
জয় বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের রেকর্ডের কারণে যখনই নির্বাচন হোক না কেন, আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারে। আওয়ামী লীগ এখনও একটি গণতান্ত্রিক দল। দলের কর্মী ও নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন কে নেতৃত্বে থাকবেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি আমাকে চান, তাহলে আমি এটা নিয়ে ভাববো। আর দল যদি তাকে (শেখ হাসিনা) নেত্রী হিসেবে দাবি করে, তাহলে তিনি থাকবেন। এটা সম্পূর্ণভাবে দলের সদস্যদের ওপর নির্ভর করে যে তাদের নেতা কে হবেন।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এর কোনও ম্যান্ডেট নেই এবং সংবিধানে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। জয় বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের সাথে যোগাযোগ করার কোনও চেষ্টা করেনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে তারা ঠিক একই পথে চলছে যা আগে একবার ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভবত বিদেশি সমর্থনে তারা যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, যার কোনও ম্যান্ডেট নেই। বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তারা দেশকে সংস্কার করবে, যা অসাংবিধানিক, মনগড়া ও নিজেদের স্বার্থে তৈরি করা সরকার। এ সময় যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি করেন তিনি। অভিযোগের মুখোমুখি হতে বাংলাদেশে ফিরে আসতে তার মা রাজি হবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
সবশেষ সামরিক দখলের সময়ও তারা আমার মাকে গ্রেফতার করেছিল। তাকে বিচারের মুখোমুখি করেছিল। পরে তাকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়। আমার মা এতে ভয় পান না। তারা যদি শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান, তাহলে কী হবে? তারা খুঁজে বের করুক। আমার মা বেআইনি কোনও কাজ করেননি। তিনি কোনও ভুল করেননি। আইনের বাইরে থেকে সরকারের লোকজন যদি কিছু করতে চায়, তাহলে তাদের বিচার করা দরকার। জয় জোর দিয়ে বলেন, আপনারা আমার মাকে দোষারোপ করতে পারেন না।