মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কে এই পেজেশকিয়ান?

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১৯ বার
আপডেট : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪

সামাজিক স্বাধীনতার ওপর কম বিধিনিষেধ এবং আরও বাস্তববাদী পররাষ্ট্রনীতির জন্য লাখ লাখ ইরানিদের আশা প্রদীপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটে কট্টরপন্থি সাঈদ জালিলিকে পরাজিত করেন মধ্যপন্থি ও সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট।
বিশ্বশক্তিগুলো তাকে স্বাগত জানাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, পেজেশকিয়ান ইরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি উত্তেজনাপূর্ণ স্থবির পরিস্থিতি থেকে শান্তিপূর্ণ উপায়ের দিয়ে অগ্রসর হতে পারেন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেজেশকিয়ানকে ভোট দেওয়া অধিকাংশ মানুষই শহুরে মধ্যবিত্ত এবং তরুণ বলে মনে করা হয়। তারা ইসলামপন্থি গোঁড়ামির কারণে ইরানে বহু বছর ধরে চলমান সামাজিক নিরাপত্তা লঙ্ঘনে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। এই কট্টরপন্থি সরকারব্যবস্থা দেশটি জনসাধারণের ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখে।
ইরানে একটি বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি প্রচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী সাবেক এই কার্ডিয়াক সার্জন। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পুনর্নবীকরণ নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন পেজেশকিয়ান। এই চুক্তির আওতায় ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছিল তেহরান। একইসঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সামাজিক উদারনীতি এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের সম্ভাবনাগুলোকে উন্নত করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
ইরানি শাসনের দ্বৈত ব্যবস্থার কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের বিষয়ে বড় ধরনের কোনও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করতে পারেন না। দেশের শীর্ষ রাষ্ট্রীয় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ইরানের নীতির ধরনকে প্রভাবিত করতে পারেন। একইসঙ্গে ৮৫ বছর বয়সী খামেনির উত্তরসূরি নির্বাচনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবেন।
ইরানের শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যক্তিত্ব এবং সরকারি শাসকদের মোকাবিলা করার কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই দেশটির ধর্মতান্ত্রিক শাসনের প্রতি অনুগত পেজেশকিয়ান। টেলিভিশন বিতর্ক ও সাক্ষাৎকারে খামেনির নীতির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ভোটারদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিওবার্তায় পেজেশকিয়ান বলেন, চেষ্টা সত্ত্বেও আমি যদি নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হই, তবে আমি রাজনীতিকে বিদায় জানাব। জনগণের সময় নষ্ট করে তাদের সেবা করতে না পারার কোনও মানে নেই।
বছরের পর বছর রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির নেতৃত্বে ইরানে সংস্কারপন্থি নীতির পুনরুত্থান হয়। মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর আবারও সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে পেলো দেশটি।
পেজেশকিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গি রাইসির মতের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাইসি খামেনি আধিপত্যের একজন অনুগত ছিলেন। তিনি নারীদের পোশাক রোধকারী আইনের প্রয়োগকে কঠোর করেছিলেন এবং পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তিটি বাতিল করে ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার এমন পদক্ষেপ তেহরানকে পর্যায়ক্রমে ওই চুক্তির পারমাণবিক সীমা লঙ্ঘন করতে প্ররোচিত করেছিল।
পেজেশকিয়ান অব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেহেতু নির্বাচিত পেসিডেন্টের ক্ষমতা খামেনির হাতে সীমাবদ্ধ তাই অনেক ইরানি স্বদেশে রাজনৈতিক বহুত্ববাদে আগ্রহী। তবে বিদেশে ইরানের বিচ্ছিন্নতার অবসান চায় এমন ইরানিরা মনে করছেন, সংস্কারপন্থি পেজেশকিয়ান চেষ্টা করলেও দেশটির শাসক তাকে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন করতে দেবে না।
ইরানের কিশ দ্বীপের ৪৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেইনি বলেন, পেজেশকিয়ান হয়তো কিছুক্ষেত্রে সামাজিক স্বাধীনতা আনতে সক্ষম হবেন। তবে তিনি একজন দুর্বল প্রেসিডেন্টই হবেন। কেননা, খামেনি ও তার মিত্ররা প্রেসিডেন্টের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। তিনি বলেন, আমি তাকে ভোট দিয়েছি যাতে জালিলি বিজয়ী হতে না পারেন।
একজন আইন প্রণেতা হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সমর্থন করে আসছেন পেজেশকিয়ান। রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিন্নমতের ওপর সরকারি সংস্থার দমন-পীড়নের সমালোচনা করেছেন তিনি।
২০২২ সালে মাহশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন পেজেশকিয়ান। নারীদের পোশাক বিষয়ক নীতি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ইরানজুড়ে টানা কয়েক মাস অস্থিরতা চলে।
প্রথম দফায় ভোট দেওয়ার পর পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা হিজাব আইনকে সম্মান করব। তবে নারীদের প্রতি কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ বা অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়।
গত মাসে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় ২০২২-২৩ সালে হিজাব আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কারাবন্দি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে করা একটি প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, রাজনৈতিক বন্দিদের বিষয়টি আমার ক্ষমতার মধ্যে নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু করতে চাইলেও আমার কোনও কর্তৃত্ব নেই।
১৯৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ে একজন যোদ্ধা ও চিকিৎসক পেজেশকিয়ানকে প্রথম সারিতে মেডিকেল টিম মোতায়েনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০০১-৫ সাল পর্যন্ত খাতামির দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৯৪ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তানকে হারান পেজেশকিয়ান। এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া দুই ছেলে ও এক মেয়েকে একা বড় করেন তিনি। কখনও দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর