কোপায় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ইংল্যান্ড-স্পেন মুখোমুখি

ফুটবল দুনিয়া বুঁদ হয়ে আছে দুই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ও কোপা আমেরিকা ফুটবলে। ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রায় একই সময়ে পর্দা নামার অপেক্ষায় আসর দুটি। আজ রাতে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল মহারণে মুখোমুখি হচ্ছে দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও স্পেন। জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। অন্যদিকে কোপা আমেরিকা ফুটবলের ফাইনালে দেখা হচ্ছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও জেমস রদ্রিগুয়েজের কলম্বিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে কোপা শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৬টায়।
সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে এবার ফাইনালে উঠে এসেছে স্পেন। এখন পর্যন্ত সব ম্যাচ জিতেছে তারা। জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ তিনবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সামনে সবচেয়ে বেশিবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি এককভাবে করে নেয়ার হাতছানি। ২০২৩ উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা জয় করা স্পেন সবশেষ ইউরোর মুকুট পরেছিল ২০১২ সালে। তার দুই বছর আগে পেয়েছিল বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। তার আগে ২০০৮ সালে আরেকবার জিতেছিল ইউরো। সবমিলিয়ে টানা ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জয়ের অনন্য কীর্তি গড়েছিল স্প্যানিশরা। এবার আরেকবার বড় মঞ্চে উৎসব করার অপেক্ষায় আছে লা রোজারা।
অন্যদিকে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ের পর আর কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মন মাতানো ফুটবল খেলা ইংলিশরা কয়েকবার তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে। এর মধ্যে গত ইউরোতে নিজেদের ঘরের মাঠ লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইতালির কাছে ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে কাঁদতে হয়েছিল হ্যারি কেনদের। এবার টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে এসে আর কাঁদতে চায়না কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ৫৮ বছর পর ট্রফি জিততে মুখিয়ে আছে ইংল্যান্ড।
তবে টানা ছয় জয়ের তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে উঠে আসা স্পেনকে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন। ফাইনাল ম্যাচ দেখতে বার্লিনে উপস্থিত থাকবেন ইংল্যান্ড ও স্পেনের শীর্ষ ব্যক্তিরা। টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর ফাইনালে ওঠা দলকে উজ্জীবিত করতে স্টেডিয়ামে থাকবেন ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম এবং নবনির্বাচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তাদের সঙ্গে আরও উপস্থিত থাকবেন আরেক ফাইনালিস্ট স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে মাঠে থাকবেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও।
অন্যদিকে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে এসেছে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এরপর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে ২৩ বছর পর কোপার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কলম্বিয়া। এবার রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় আছেন লিওনেল মেসি-ডি মারিয়ারা। এখন পর্যন্ত উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বার করে শিরোপা জয়ের রেকর্ড আলবিসেলেস্তাদের। নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় কোপার শিরোপা জেতার সুযোগ কলম্বিয়ার।
চলমান আসরে দুদলই এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছে। সবমিলিয়ে কলম্বিয়া অপরাজিত আছে টানা ২৮ ম্যাচ। যে কারণে ফাইনাল ম্যাচটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মেসি ও আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কলম্বিয়ার অধিনায়ক রদ্রিগুয়েজও দেশকে সেরা সাফল্য এনে দিতে মুখিয়ে আছেন।
টানা তিন আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার রেকর্ড নেই দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশের। দুইবার মহাদেশীয় শিরোপা এবং একবার বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি গড়তে পারেনি লাতিনের কোনো দলই। এমনকি ইউরোপে প্রজন্ম বা সর্বকালের সেরা দলগুলোও পারেনি নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। একমাত্র দেশ হিসেবে এ কৃতিত্ব আছে স্পেনের। ২০০৮ সালের ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ সালের ইউরো টানা জয় করেছিল দেশটি। এবার আর্জেন্টিনার সামনে সেই সুবর্ণ সুযোগ।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা আর ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে মেসির দল। এবার ২০২৪ কোপা জিততে পারলেই স্বপ্নের ট্রেবলের চক্রপূরণ করতে পারবে আর্জেন্টিনা। ফাইনাল নিয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি বলেন, ‘আমি শান্ত আছি। বরাবরের মতো ফাইনালের দিনটির অপেক্ষায় আছি। আশা করি আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে শেষ হাসি হাসতে পারব।’
ফাইনালে সবাইকে চাঙ্গা রাখতে মেগা কনসার্টের আয়োজন করেছে কোপার আয়োজক কনমেবল কর্তৃপক্ষ। যেখানে গান পরিবেশন করবেন বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা। ফ্লোরিডার হার্ডরক স্টেডিয়ামে শাকিরার কনসার্ট ম্যাচের শুরুতে নাকি মাঝামাঝি সময়ে করা হবে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছিল। অবশেষে খেলার মধ্যবিরতিতে কনসার্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে কারণে মধ্যবিরতি ১৫ মিনিট থেকে বাড়িয়ে ২৫ মিনিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাফটাইমের বিরতি বাড়ানোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে কনমেবল। এ কারণে খেলার ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা।