বুধবার হোটেল লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকে বলবে আফগান ইস্যুটা আসার ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুটা সাইড লাইনে পড়ে গেছে। না, এটা এখনও খুব প্রাসঙ্গিক। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো গত রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আফগানিস্তান সঙ্কটে নিবদ্ধ থাকায় রোহিঙ্গা সমস্যার চ্যালেঞ্জ ‘বেড়ে যাচ্ছে’। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত নন। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) সামিয়া আঞ্জুমও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এখন বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে।ভাল বিষয়টা হল, আগে আমরা খুঁজে খুঁজে (বিভিন্ন দেশের সঙ্গে) অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতাম। অনেক সময় পেতাম না। এখন ওরা আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য…এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্য… বাংলাদেশ নিয়ে যেটা জেফরি স্যাক্স বলেছেন, যে বাংলাদেশকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারা প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেফরি ডি. স্যাক্স মহামারীর মধ্যেও এসডিসি অর্জনে অগ্রগতি ধরে রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ওই অনুষ্ঠানে। সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা জানতে চান এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এই ম্যাজিকটা কীভাবে হল?তুরস্ক সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, টার্কির প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন, তোমার দেশের লোকজন এত কম মারা গেছে কোভিডের কারণে। তোমাদের ম্যাজিকটা কী? আমি বললাম ম্যাজিক হলো শেখ হাসিনা, উপরওয়ালা। আর আরেকটি হচ্ছে আমাদের দেশের তরুণদের সংখ্যা খুব বেশি হওয়ায় তাদের বোধহয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। এজন্য বোধহয় কোভিড একটু কম হয়েছে। তবে পরক্ষণেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা বৈজ্ঞানিক কোনো বিশ্লেষণ নয়, এটা একটা পারসেপশন। তিনি বলেন, আমাদের ইদানিং অন্যরা ডেকে… এটা সম্ভব হয়েছে… এই যে একটা উচ্চতর অবস্থানে পৌঁছেছি, এটা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক একটা সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক দূরদর্শিতার জন্য সম্ভব হয়েছে।
বুধবার ‘হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কোভিড- ১৯ সামিট: এনডিং দ্য প্যানডেমিক আর বিল্ডিং ব্যাক বেটার হেলথ সিকিউরিটি টু প্রিপেয়ার ফর দ্য নেক্সট’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানেও ভিডিও বার্তায় ব্ক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠান সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এই কোভিডটাকে খুব সুন্দরভাবে মানেজ করেছে। আল্লাহ মেহেরবান তৃতীয় ঢেউটাও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর ওপরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য দিয়েছেন। এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের যে সাফল্যের গল্প… এইক্ষেত্রে একটা সাফল্যের গল্প।
আব্দুল মোমেন বলেন, সৌভাগ্যবশত আমাদের যে প্রথম ও দ্বিতীয় অতিমারী শুরু হল, তখন আমরা পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছি। প্রথম ও দ্বিতীয় অতিমারীতে সাত হাজারের কম লোক মারা যায়। করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় মানুষের জীবন জীবিকা সচল রাখা এবং অন্যদিকে অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথাও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিড মোকাবেলায় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পনা তৈরির সময় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, এই মহামারীর মধ্যে দেশের কোনো লোক যেন না খেয়ে মারা না যায়। তখন একদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন। ‘দেখেন আপনারা আইসিইউ ইউনিট করেন, হাসপাতালের শয্যার ব্যবস্থা করেন… এগুলো আপনারা করেন, কিন্তু একটা জিনিস আপনারা কখনো ভুলবেন না। সেটি হচ্ছে যে আমার কোনো লোক এই কোভিডের সময়ে… আপনারা লকডাউন দিয়েছেন। আমরা লকডাউন ৬৬ দিন দিয়েছিলাম। বলেন, এইসব দিয়েছেন… আমার কোনো লোক যাতে না খেয়ে না মরে’।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ব্রিফিংয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটা ভালো সমাধানের জন্য আজকে সভায় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই একমত হয়েছেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ হল যেটা, এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারেই রয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফেরার মধ্যেই সমস্যার সমাধান। সেটার জন্য যা যা করণীয় তারা চেষ্টা করবে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি যেন স্থিতিশীল হয় এবং রোহিঙ্গারা যেন সেখানে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।