মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

এমপি আনার হত্যায় সবাই গ্রেফতার: ডিবিপ্রধান

ভয়েস বংলা প্রতিবেদক / ২৪ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কিলিং মিশনে জড়িত সাতজনের সবাই গ্রেফতার হয়েছে। যেকোনো হত্যার পেছনে মোটিভ থাকে। সংসদ সদস্য আনার হত্যায় কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, হত্যার সুনির্দিষ্ট মোটিভ কী? সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনার হত্যায় মোটিভ অবশ্যই আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সুনির্দিষ্ট মোটিভ বলতে পারছি না। আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সাতজনের সবাই গ্রেফতার হয়েছে। যেকোনো হত্যার পেছনে মোটিভ থাকে। আনার ছিলেন একজন জনপ্রিয় সংসদ সদস্য। তাকে টাকা-পয়সা লেনদেনের কথা বলে সঞ্জীবা গার্ডেনে নিয়ে যায় শাহীন। তবে তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল? কারা লাভবান? কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান সেটা বের হবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, কারা আর্থিক, রাজনৈতিকভাবে লাভবান সেটা বের করা হবে। মোটিভ অবশ্যই আছে। সম্ভাব্য সব কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সম্ভাব্য সবগুলো কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। সর্বশেষ গ্রেফতার ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার সম্ভাব্য সব মোটিভ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনর্থক কাউকে ডাকাডাকি করছি না। নির্দোষ কাউকে হয়রানি করছি না। তিনি বলেন, যখনই আমাদের কাছে খবর আসে এমপি আনার হত্যা তখনই আমরা মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করি। এরপর তানভীর ও সিলিস্তাকে গ্রেফতার করি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আমরা কলকাতায় গিয়ে সঞ্জিবা গার্ডেন পরিদর্শন করি। এই হত্যাকাণ্ডে আরও দুজন জড়িত বলে দুজনের নাম জানতে পারি। তারা ফয়সাল ভূঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, তারা আত্মগোপনের জন্য খাগড়াছড়ির ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডের মাঝখানে পাতাল কালি মন্দিরে লাল ধূতি পরে অবস্থান করছিল। সেখানে তারা হিন্দু পরিচয়ে পাতাল কালি মন্দিরে বাঁচার জন্য লুকিয়েছিল।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, এই দুজনকে গ্রেফতারের জন্য ডিবির একটি দল ছিল ঝিনাইদহে, সুন্দরবনেও একটি দল গিয়েছিল। আর দুটি দল ছিল খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফটিকছড়ি সীতাকুণ্ডে তারা কাজ করছিল অনেকদিন ধরে। সবদিকে গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে গতকাল বুধবার সেই দুজনকে গ্রেফতার করি। শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের জন্য যা যা করার দরকার তারা তাই করেছে। তিনি বলেন, ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। বিধান সভার কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিল ফয়সাল। ফয়সাল আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যান। যেখানে অপেক্ষায় ছিল শিমুল ভূঁইয়া। আর অন্যদিকে কলকাতা সঞ্জিবা গার্ডেনের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ ও জিহাদ হাওলাদার। ফয়সাল, শিমুল ভূঁইয়া এমপি আনারকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন সিলিস্তা রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
তারা নিচে কর্নারের রুমে যান। আনার যখন বুঝতে পারেন তিন চারজনের গতিবিধি, তখন তিনি অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌঁড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টার সময় ফয়সাল তার নাকে মুখে ক্লোরোফম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করা হয়।
ডিবিপ্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনার কিলিং মিশনে সাতজন অংশ নিয়েছেন। সাতজনই গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সিলিস্তা ফয়সাল, মোস্তাফিজুর, কালকাতায় গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম। এর বাইরে আরও দুজন আমাদের কাছে গ্রেফতার রয়েছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও গ্যাস বাবু। ঢাকার ডিবির হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, এখনো আমাদের কাছে শাহীন মাস্টারমাইন্ড। কারণ তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া, এই সবই শাহীন করেছে। শাহীন ১০ মে কলকাতা থেকে দেশে ফিরে আসে। জিহাদ বাদে হত্যার পর একে একে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সবাই দেশে এবং কেউ নেপালে পালিয়ে যায়। শিমুল ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর শাহীন প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল তারপর দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
খাগড়াছড়ি পাহাড় থেকে গ্রেফতার ফায়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সম্পর্কে কিছু বলেছে কি-না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতার একটি মার্কেট থেকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি চেয়ার কেনা হয়। সঙ্গে কিনে আনা হয় ক্লোরোফম। সেই চেয়ারে বেঁধে আনারকে বিবস্ত্র করা হয়। এই কাজগুলো করেছিল ফয়সাল। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সিয়াম এনে দিয়েছিল ফয়সালকে।
ফয়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যার কাজ শেষ করে দেশে ফিরে শাহীনকে ফোন করে বলে, আমরা কোথায় থাকবো?
তখন শাহীনের বসুন্ধরায় বাসায় যায় তারা। সেখানে গিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ছিল ট্রাক ড্রাইভার। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেয় শাহীন। মোবাইল বন্ধ করে তারা চলে যায় খাগড়াছড়ি গহীন বনে। সেখানে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালি মন্দিরে নিজেদের নাম বদলে ফেলেন।
ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। তারা সেখানে বলেন, মা কালীকে তারা খুব ভালোবাসেন। কালিমন্দির ছাড়া তারা থাকতে পারেন না। তারা চুলের ধরণ পরিবর্তন করেন, ধূতিও পরেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর