বায়ুদূষণ রোধের বিষয়টি পরিবেশবাদীদের আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাঝে মাঝে কিছু ভিআইপি রাস্তায় পানি ছেটানো আর গোটা কয়েক ইটভাটায় অভিযানে আটকে আছে সরকারের দূষণরোধের কাজ। এদিকে বুধবারও ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় সারাদিনই বায়ুদূষণের মাত্রায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল ঢাকা। সন্ধ্যার পরও তা নামেনি। পরিবেশবাদীরা বলছেন, আলোচনা আর সুপারিশেই আটকে আছে দূষণ রোধের কাজ। সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তব প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় আজ সন্ধ্যায় বায়ু দূষণের মানমাত্রা ছিল ১৮৬, যা আজ সারাদিনে ১৫১ থেকে ২০০’র মধ্যে ওঠানামা করেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আদালতের দেওয়া একাধিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না থাকায় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে আদালতে সংযুক্ত থাকার পাশাপাশি জেলাগুলোর অবৈধ ইটভাটার তালিকা দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার নির্বাহী সহ সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়ে কথা বলছি, আলোচনা করছি, সুপারিশ করছি। আমাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্লিন এয়ার অ্যাক্টের খসড়া পরিবেশ মন্ত্রণালয় তৈরি করতেই দিনের পর দিন কেটে গেছে। এটি আর চূড়ান্তই করা হয়নি। ইটভাটায় অভিযান খুবই সামান্য। রাস্তায় পানি ছেটানোর কথা বলা হলেও আমরা সাধারণ মানুষ বাস্তবে দু-একটা ভিআইপি রাস্তা ছাড়া কোথাও পানিও ছেটাতে দেখি না। তিনি বলেন, দূষণ বন্ধের কাজ তো করাই হচ্ছে, বরং দূষণের জন্য দায়ী বিষয়গুলো কমিয়ে আনার বিষয়েও কোনেও ভ্রুক্ষেপ নেই কারেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, আর কত বলবো। আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, কিন্তু কাজ তো হচ্ছে না। খালি আলোচনাই হচ্ছে। এখন আদালতেই নির্দেশে ডিসিরা যদি কঠোর কোনও উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো কিছুটা কাজ এগুতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।আদালতে শুনানিকালে মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ে হাইকোর্টের কয়েকদফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মিডিয়ায় রিপোর্টে এসেছে। অবৈধ ইটভাটা প্রশাসনের সামনে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময় করে মালিকরা অবৈধভাবে সাভার, ধামরাইয়ে ইটভাটা চালাচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করে তিনি বলেন, এই রিট মামলায় ৮ বার আদালত বিভিন্নভাবে নির্দেশনাগুলো দেওয়ার পরেও বিবাদীরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। এসময় আদালত বলেন, অনেকবার আদেশ দিলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আদালত বসে থাকতে পারে না।
এর আগে ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। এরপর ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কয়েকদফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।