অর্থ উপার্জনে রাজনীতি কোনও পেশা হতে পারে না: হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

অর্থ উপার্জনের জন্য রাজনীতি কোনও পেশার আওতায় আসতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতির পৃথক মামলায় বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমানউল্লাহ আমান দম্পতির সাজা বহালের রায়ে মঙ্গলবার (৩০ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, রাজনীতিবিদরা জনগণ ও দেশের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে জড়িত হন। রাজনীতি জনগণ ও দেশের কল্যাণে এক ধরনের মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার কাজ। তাই রাজনীতিবিদরা জনগণের সম্পদের রক্ষক হবেন। তারা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন না। বৈধ ব্যবসা এবং অন্যান্য পেশার আশ্রয় নিয়ে অর্থ-সম্পত্তি অর্জনের অনেক উপায় রয়েছে। তবে অর্থ উপার্জনের জন্য রাজনীতি কোনও পেশার আওতায় আসতে পারে না।
আদালত আরও বলেন, দুর্নীতি সব লিঙ্গ, বয়স ও বর্ণের মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে। দেশের জনগণ, বিশেষ করে দায়িত্বশীল স্টেকহোল্ডারদের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যে তারা কেবল দুর্নীতির শিকারই নন, এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল খেলোয়াড়ও।
‘আপনি যদি বিশ্বে পরিবর্তন আনতে চান এবং বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান তাহলে এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার জন্য একটি কার্যকর ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি হিসাব দেওয়ার দায়িত্ব থাকতে হবে। আইনের বিধান অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে’, বলেন আদালত। বাল্যকাল থেকেই শিশুদের সততা ও অসততার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখানো উচিত বলে মন্তব্য করেন আদালত।
আদালত বলেন, দুর্নীতিবাজরা তাদের সমালোচকদের চুপ করতে এবং চুরি করা সম্পদ লুকানোর জন্য একে অপরকে সাহায্য করে। তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে। বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিবর্তনের অপেক্ষায় নাগরিকরা বসে থাকতে পারে না। আমাদের প্রত্যেককে সেই পরিবর্তনের অংশ হতে হবে। বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশি ছাড়া কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
হাইকোর্ট বলেন, একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্বে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতির অবসান ঘটানো, তা যেখানেই হোক বা যে রূপেই হোক না কেন। আমরা জানি যে সফল হওয়ার একমাত্র উপায় হলো নাগরিকদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত করা। আমরা সমাজ থেকে সব ধরনের দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের উপশম, প্রতিরোধ এবং মূলোৎপাটন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৯ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
এদিকে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের আরেক মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানকে বিচারিক আদালতের দেওয়া কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আদালত।