শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

অপারেশন সিঁদুর— যে অস্ত্রে পাকিস্তানে আঘাত হানল ভারত

রিপোর্টার / ৪ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫

কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জের ধরে দু’সপ্তাহ পরের এক মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমগুলো হামলায় ৭০ জন নিহতের খবর দিলেও পাকিস্তান বলছে এ সংখ্যা ৩১।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ভারতের এ হামলা নিয়ে দিনভর চলেছে উত্তেজনা। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশেরই সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা রেখেছেন উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা কমিটি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে এ হামলার ‘সমুচিত জবাব’ দেওয়ার অনুমতিও দিয়েছে।

ভারতের যে হামলা নিয়ে এত উত্তেজনা, সেই হামলায় ভারত কোন কোন যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে কৌতূহল। পাকিস্তান বলছে, হামলাগুলো চালানো হয়েছে বেসামরিক স্থাপনায়। তবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা কেবল জঙ্গি ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং তাদের যুদ্ধাস্ত্রগুলো নিখুঁতভাবে কেবল লক্ষ্যবস্তুতেই আঘাত করেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, দেশটির সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান হিসেবে এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে মূলত রাফাল, যা ফ্রান্সের কাছ থেকে কিনেছিল ভারত। আর তার সঙ্গে হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুই অস্ত্র— স্ক্যাল্প ও হ্যামার। রাফাল থেকেই এই দুই অস্ত্র ছুড়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে।

সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করার জন্যই এই দুটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। দুটিই দূরপাল্লার অস্ত্র, যা সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

দুটি অস্ত্রের মধ্যে স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রটি পরিচিত ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামে। এই ক্রুজ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা ‘নির্ভুল’ আঘাত হানতে পারে। আর সেটি নিশ্চিত করার জন্য ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে তিন ধরনের নেভিগেশন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী মূলত এ কারণেই স্ক্যাল্প ব্যবহার করে। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো— রাতে ও সব ধরনের আবহাওয়াতেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই স্ক্যাল্প ব্যবহার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

শুধু তা-ই নয়, শক্ত বাংকার ভেদ করে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে স্ক্যাল্পের। গত বছর প্রথম বার রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইউক্রেনীয় সেনারা। এরপর ভারত ব্যবহার করল এই অস্ত্র।

এ ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো— এগুলো লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছোনোর পর এতে থাকা ইমেজিং ইনফ্রারেড সিকারের কারণে অস্ত্রটি নিজে থেকেই লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে যদি মিলে যায়, তবেই তা ধ্বংস করে। ফলে আশপাশের এলাকার ক্ষতি এড়িয়ে শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়।

এ ছাড়া স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রটি শনাক্ত করাও প্রতিপক্ষের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। কারণ যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার সময় স্ক্যাল্প খুব নিচু দিয়ে উড়ে যায়। ফলে তা শত্রুদের রাডারে ধরা পড়া প্রায় অসম্ভব। জ্যামারও এর ওপর খুব একটা কাজ করে না।

স্ক্যাল্প ছাড়া মঙ্গলবার রাতের হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনী আর যে অস্ত্রটি ব্যবহার করেছে সেটি হলো ‘হাইলি অ্যাজাইল মডুলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ’, যা সংক্ষেপে পরিচিত ‘হ্যামার’ নামে। ‘গ্লাইড বোমা’ বললেও এই অস্ত্রটি চিনবেন অনেকে।

তুলনামূলকভাবে এই অস্ত্রটির পাল্লা কিছুটা কম— ৭০ কিলোমিটার। ফ্রান্সের তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র পাল্লার শক্তিশালী বাংকার ও বহুতল ভবনগুলোতে আঘাতের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, স্থির ও চলমান— দুই ধরনের লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধেই নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এই অস্ত্রটি।

রুক্ষ ভূখণ্ডে খুব কম উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে হ্যামার। কঠিন ও সুরক্ষিত কাঠামো ভেদ করার মতো অত্যাধুনিক ক্ষমতাই অন্যদের থেকে হ্যামারকে আলাদা করে দিয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জিপিএস, ইনফ্রারেড ইমেজিং ও লেজার টার্গেটিং থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তুতে আছড়ে পড়ে এই হ্যামার। তার কার্যকারিতার কথা মাথায় রেখেই পাকিস্তানে হামলার জন্য স্ক্যাল্পের পাশাপাশি হ্যামার বেছে নেয় ভারত।

সবশেষ খবর বলছে, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আহত হয়েছে ৫৭ জন। আর ভারত বলছে, ভারত-শাসিত কাশ্মিরে পাকিস্তানের পালটা হামলায় ১৫ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছে।

এর মধ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ভারতের ‘কাপুরুষোচিত’ হামলার জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়ে ভারত ‘ভুল করেছে’ এবং এর জন্য ‘তাদের মূল্য দিতে হবে’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জাপান, ফ্রান্স, তুরস্কসহ নানা দেশ। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও উদ্বেগ জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। দুই দেশকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশও।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর