নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
আগের বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী নতুন এই মুদ্রানীতিতে সবচেয়ে জোর দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর। এবারের মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ জোগান রাখা হয়েছে। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক লিখিত বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে সরেজমিন নিরীক্ষা কার্যক্রম অনেকটা শিথিল থাকায় প্রণোদনা প্যাকেজের অপব্যবহার নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর অফসাইট নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সরেজমিন নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি প্রণোদনার প্রভাব নিয়ে বিশেষ সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়টিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। এছাড়া আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং বিদেশে অর্থপাচার রোধকল্পে বিএফআইইউয়ের মাধ্যমে আর্থিক গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে ফজলে কবির বলেন, করোনার মধ্যে প্রবাসী আয় অনেকটা বেড়েছে। আবার ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জমা আছে। এই অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদবুদ তৈরি করলে তা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যবৃদ্ধি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পুরো অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১১ শতাংশ। যদিও গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ঋণ গ্রহণের প্রবৃদ্ধি ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ লক্ষ্য ঠিক রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি মানসম্মত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে অভ্যন্তর সতর্কতার সঙ্গে সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর থেকে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর থেকে তা এক বছরের জন্য করা হয়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।