ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র গতি ঘণ্টায় ১১৭ কিমি, ভারী বৃষ্টির শঙ্কা
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে আগের মতো ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের প্রভাবে দেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এখন গতিপথ ভারতের দিকে। তবে ঝড়ের গতিপথ বদলাতে পারে যেকোনও সময়। তাই সবাইকে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে সকালে ছিল ১ হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল, এখন কিছুটা এগিয়ে ১ হাজার ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখনও একই জায়গা আছে। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন আছে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন তা ১ হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আগের মতোই ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে নদীবন্দরের জন্য দেওয়া সতর্কতায় বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বা পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌ-বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বা পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌ-বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাভাসে বলা হয়, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, খুলনা ও যশোর জেলাসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কমে আসতে পারে। বৃষ্টির কারণে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।