বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

ইসির সংলাপ শেষ

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৯৭ বার
আপডেট : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের মধ্যে নিবন্ধিত কোনও দলই এই সংলাপে অংশ নেয়নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে নিবন্ধিত সব দল অংশ নিয়েছে। জেপি ও ন্যাপ নতুন করে সময় চেয়েছে। এই দুটি দলের সঙ্গে পরে সংলাপে বসবে ইসি। বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ না নেওয়ায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ, পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

এ সংশয় খোদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও এসেছে। তবে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ৩২০টির মতো প্রস্তাব দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএম, নির্বাচনকালে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো ইসির অধীনে রাখা, একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচন, নির্বাহী ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, প্রবাসীদের ভোট দানের ব্যবস্থা ইত্যাদি।

সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ইভিএম-এর বিপক্ষে মত দিয়েছে। সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৯টিই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদের কেউ কেউ ইভিএম-এর বিপক্ষে, কেউ কেউ আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার, কেউ শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম চায় না বলে জোর দাবি করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছে। তবে, তাদের শরিকদের মধ্যে কেউ কেউ ইভিএমের বিরোধিতাও করেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইভিএমকে সংকট বলে আখ্যায়িত করেছেন। রবিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশকিছু মত পেয়েছি। আবার অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে। অনেককে আমরা আস্থায় আনতে পারছি না।

সংলাপে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ৯টি দল অংশ নেয়নি। আর ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জেপি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নতুন করে সময় চেয়েছে। এই দুটি দলের সঙ্গে পরে সংলাপে বসবে ইসি। বর্তমান ইসি তার সংলাপে সব দলকে না পেলেও কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিদায়ী কমিশন তার সংলাপে দেশের নিবন্ধিত সব দলকেই সংলাপে পেয়েছিল।

সংলাপে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। দলগুলো- বিএনপি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।

ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬টি দল থেকে অন্তত ৩২০টি মতো প্রস্তাবনা এসেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সুনির্দিষ্ট সংখ্যা দিলেও কোনও কোনও দল আবার তা করেনি। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম দিয়েছে ১৩ দফা সুপারিশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ বেশ কয়েকটি,  বাংলাদেশ কংগ্রেস ১৬ দফা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট- এর ৯ দফা বেশ কয়েকটি, নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে জাতীয় পরিষদ গঠনের সুপারিশসহ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) বেশ কয়েকটি, খেলাফত মজলিসের ৪ দফা, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২০ দফা,  ইসলামী ঐক্যজোট এর ১১ দফা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস-এর ১৫ দফা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এর ৯ দফা, গণতন্ত্রী পার্টির ৫ দফা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩ দফা, গণফ্রন্ট  ২২টি,  বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন-এর ৪০ দফা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১২ দফা,  ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৯ দফা, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ ১৯ দফা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১২ দফা প্রস্তাব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১১ দফা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর ৭ দফা প্রস্তাব,  ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ( এনপিপি) ১৬ প্রস্তাব, জাকের পার্টি’ ৪ প্রস্তাব,  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব, গণফোরাম ১০টি,  বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ ১১ দফা প্রস্তাব, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১১,  আওয়ামী লীগ ১৪টি, জাতীয় পার্টি ৪টি প্রস্তাব দেয়। অবশ্য কয়েকটি দল তাদের লিখিত প্রস্তাবনার বাইরেও মৌখিক আলোচনায় আরও কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সব দলের প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য পর্যালোচনা করা হবে। এগুলো ফেলে রাখা হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যাবতীয় পদক্ষেপ নেবো। সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো দলীয় প্রধানদের কাছেও পাঠানোর পাশাপাশি সরকারের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হবে।

ইসি গঠনের পর ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন। এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে মত বিনিময় করলে তাতে ২৮টি দল অংশ নেয়। বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর